প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 8 Nov 2025, 11:06 AM
৫ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল মুরাদনগরে নারীদের হাতে তৈরি দোলনা শিল্পে বিপ্লব
সুমন সরকার, মুরাদনগর
শুরুটা ৩০ বছর আগে। মাত্র দু’চারটি পরিবার থেকে এখন বিস্তৃত ৫ হাজার পরিবারে। পরিবারের কাজের পাশাপাশি গ্রামের ৯০শতাংশ নারী হাতে বুনে তৈরি করেছেন রঙিন সুতার দোলনা। নারীদের এমন শিল্প বিপ্লব এবং আয় রোজগার দেখে লোভ সামলাতে পারেনি কয়েক গ্রামের পুরুষরা। তাই পুরুষেরা ও বেছে নিয়েছেন দোলনা তৈরির পেশা। যুগের পর যুগ হাজার পরিবারের যেন একমাত্র আয়ের উৎস বাশ-বেত ও সুতোর তৈরি দোলনা। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের দৈয়ারা চিত্র এটি। গ্রামটি এখন দোলনার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। দৈয়ারা গ্রামের নারীদের দোলনা শিল্প বিপ্লব এখন এলাকার দৃষ্টান্ত। এদিকে রঙিন সুতোয় দোলনা তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য বদল করে নিচ্ছেন হাজার হাজার নারী পুরুষ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পেলে চমক সৃষ্টি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এ পেশায় থাকা সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দৈয়ারা গ্রামে ৩০বছর আগে দোলনা তৈরি শুরু করে একটি পরিবার। বর্তমানে ওই গ্রামের আশপাশের গ্রাম গান্দ্রা, তেলুয়া মাইনকা, বাবুটিপাড়া ও পাহাড়পুর সহ ৫টি গ্রামের অত্যন্ত ৫ হাজার পরিবার এ দোলনা তৈরির কাজে জড়িয়ে পরেছে।
দোলনা তৈরি করতে সুতা উৎপাদন ও সুতায় বিভিন্ন রকমের রং করার জন্য গড়ে উটেছে এ এলাকায় ৩টি সুতা তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় নারী পুরুষ উভয়ে মিলে কাজ করছেন। বর্তমানে ক্ষুদ্র এ কুটির হস্তশিল্পটি দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পরলেও এ শিল্পের পেছনের কারিগরদের নাম রয়েছে অজানা। এ গ্রামে তৈরি হয় বাচ্চাদের দোলনা, শোয়ার দোলনা ও হেসক দোলনা। এই ৩ রকমের দোলনা তৈরিতে বাচ্চাদের দোলনায় খরচ পরে ১৮০টাকা, শোয়ার দোলনা ৩৫০টাকা, হেসক দোলনা ১৮শ’ টাকা। বাচ্চাদের দোলনা তৈরির পর বিক্রি করা হয় ২২০ টাকা, শোয়ার দোলনা ৪শ’ টাকা ও হেসক দোলনা ২১শ’ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০বছর আগে দৈয়ারা গ্রামের আব্দুল মজিদ ভূঁইয়ার ছেলে কবির ভূঁইয়া প্রথমে এ গ্রামে দোলনা তৈরির কাজ শুরু করেন। পরে তার কাছ থেকে দোলনা তৈরি শিখে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এ পেশায় আসলেও বর্তমানে এ পেশা ছড়িয়েছে ৫ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মাঝে। এছাড়া এই ৫ গ্রাম থেকে মাসে প্রায় ২ লাখ দোলনা তৈরি হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দৈয়ারা গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে নারীরা তৈরি করছেন দোলনা। নারীদের পাশাপাশি পরিবারের শিশু কিশোররাও তৈরি করছেন দোলনা। কেউ বাড়ির উঠানে কেউবা পুকুরপাড়ে আবার ঘরের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে একের পর এক তৈরি করা হচ্ছে দোলনা। নারীরা দোলনা তৈরির জন্য সুতা বুনলেও এসব দোলনা তৈরির জন্য বাশের তৈরি চাক (ফ্রেম) তৈরি করেন পুরুষেরা। আকারবেধে বাচ্চাদের দোলনা প্রতি মজুরি ২৫ টাকা, শোয়ার দোলনা ৫০ টাকা, হেসক দোলনা ১৫০ টাকা মজুরির বিনিময়ে এসব দোলনা তুলে দেন মহাজনদের হাতে।
দেলোয়ারা বেগম নামে এক দোলনা তৈরির কারিগর বলেন, আমি প্রায় ১৮বছর যাবৎ এ দোলনা তৈরির পেশার সাথে সম্পৃক্ত আছি। আমার মত এ এলাকার অধিকাংশ নারীরা এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। আগে নিজেরা সবকিছু সংগ্রহ করে দোলনা বুনে বাজারে বিক্রি করতাম। বর্তমানে এলাকায় কিছু মহাজন আছে তাদের কাছ থেকে মজুরির বিনিময়ে দোলনা বুনি। সবকিছুর দাম বাড়লেও বর্তমানে আমোদের মজুরি আর বাড়েনি। আমাদের যদি সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হত তাহলে আমরা নিজেরাই দোলনা তৈরি করে বাজারজাত করতে পারতাম। আমরা চাই সরকারের হস্তক্ষেপে এ হস্তশিল্পে নজর দেওয়া হউক। এ শিল্পে সরকারের নজরে আসলে আমাদের জীবনযাত্রার মান কিছু হলেও উন্নতি হবে।
দোলনা ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া বলেন, এ এলাকার বিভিন্ন বাড়ী বাড়ী ঘুরে দোলনা কিনে সংগ্রহ করি। এবং সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাই। আমার মত অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা এখান থেকে দোলনা কিনে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যান। বাজারে সুতার তৈরি দোলনার ব্যপক চাহিদা রয়েছে।
দৈয়ারা গ্রামের দোলনা তৈরির প্রথম কারিগর কবির ভূঁইয়া বলেন, আমি প্রথমে কারুশিল্পের কাজ করতাম। এবং কারু কাজের মালামাল দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। একদিন ঢাকায় কারুশিল্পের মালামাল বিক্রি করতে গেলে ঢাকার এক ব্যবসায়ী আমাকে সুতার তৈরি দোলনার একটি ছবি দেখায়। এবং আমাকে প্রস্তাব করে ছবির দেখানো অবিকল দোলনা আমি তৈরি করে দিতে পারব কিনা। পরে আমি বাড়িতে ফিরে দুই মাসের চেষ্টায় এ দোলনা তৈরি করি এবং তা বাজারজাত করি।
পর্যায়ক্রমে এ দোলনার চাহিদা বাড়লে এলাকার কয়েকটি পরিবার আমার সাথে যোগ দেয় এ দোলনা তৈরির কাজে। বর্তমানে এ এলাকা সহ আশপাশের ৫ হাজার পরিবার এ দোলনা তৈরির পেশার সাথে সম্পৃক্ত। দোলনা তৈরি করে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করলে এ ক্ষুদ্র কুটির হস্ত শিল্পটি আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে।
বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরমান মিয়া বলেন, এ দোলনা তৈরির শিল্পটি বহু বছর যাবত দৈয়ারা সহ আশপাশের এলাকার মানুষের পেশা হয়ে আছে। যুগের পর যুগ কারিগররা এ পেশায় যুক্ত থাকলেও তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি। এ হস্তশিল্পটির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাব, যা বললেন বিএনপির মহাসচিব
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফ...
জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারায় ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ‘২ সন্ত্রাস...
ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় বন্দুকযুদ্ধে দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সেনা...
নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কাঁদলেন ইয়াছিন
মাহফুজ নান্টুকুমিল্লা টাউন হলে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীদে...
আসুন দলের নির্দেশনা মেনে ঐক্যের রাজনীতি করি-মনিরুল হক চৌধু...
নিজস্ব প্রতিবেদকতারেক রহমানের হাতে দেশ কখনো পথ হারাবে না। তাঁর বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকার প্রমান করে ত...
সিপাহি-জনতার বিপ্লব দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির-মুন্সী
মোঃ আক্তার হোসেনকুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক চারবারের এমপি আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর...
তিতাসে ধানক্ষেতে পাখির আক্রমণ বৃদ্ধি ফসল রক্ষায় কৃষকদের জাল...
নাজমুল করিম ফারুকআউশ-বোনা আমন ধান পাকা শুরুর সাথে সাথে কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় ধানক্ষেতে বাবুই বা বা...