
প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: আন্তর্জাতিক | প্রকাশ: 6 Sep 2025, 12:03 PM

যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাতকড়া শেকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হলো ৩০ বাংলাদেশিকে

এফএনএস
হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারী বিশেষ ভাড়া করা বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। রানওয়ে পর্যন্ত শেকল বেঁধেই তাদের আনা হয়েছে। এরপর রানওয়ে থেকে শেকল খুলে এরাইভাল গেটে আনা হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। কাউকে কোনো ধরনের ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। গণফেরত আসাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাত ১১টার পরপর বিমানটি নামলেও তিন ঘণ্টা সেটি রানওয়েতে ছিল। এই ৩ ঘণ্টায় বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শেকল খোলা হয়। বিমানবন্দরের এরাইভ্যাল এড়িয়াতে পৌঁছানোর আগেই সবাইকে শেকলমুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে রাত ২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিম এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘ যাত্রা ও শেকল পরে থাকার কারণে আগতরা ছিলেন বিধ্বস্ত। ওই সময় নোয়াখালীর ২২ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ বিমানবন্দরে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এই লম্বা যাত্রায় পুরোটা সময় হাতে-পায়ে দাগী আসামিদের মতো শেকল পড়িয়ে রেখেছিল। একে তো দেশে ফেরত আসার হতাশা, তার ওপরে ট্যারোরিস্টের মতো হাতে-পায়ে শেকল পড়িয়ে মাতৃভূমিতে আসার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কারও না হোক। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় একাধিক দফায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশি ফেরত আসার তথ্য জানা গেছে। প্রথম দিকে হাতকড়া ও শিকল না পরানো হলেও ২ আগস্ট একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭ তে এক নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়। তাদের সবার হাতকড়া ও শেকল ছিল। ফেরত আসা ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রায় তাদের হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। খেতে দেওয়া হয়েছে শুধু রুটি আর পানি। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও একজন অফিসার নিয়ে যেতেন, আবার শেকলে বেঁধে দিতেন। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও এইচএসআইএর ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র বলছে, এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে। মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কারণে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে। বেশির ভাগ অভিবাসী মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকার দেশ বা অন্য কোনো পন্থায় ৩০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। ফিরে আসা কর্মীদের বড় একটি অংশ জানাচ্ছিলেন, তারা মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে ম্যাক্সিকোতে মাফিয়াদের কাছে আটক হয়। অন্তত ছয় জন জানিয়েছেন, তাদের জিম্মি ও অত্যাচারের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের তানজিল হাসান জানান, তিনিসহ অনেকেই এই মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চান। তাদের কারো কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে এই চক্র। তারা তাদের সহায়-সম্পত্তি সব কিছু বিক্রি করে মানবপাচারকারী চক্রকে টাকা দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, এমন অগণিত বাংলাদেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে অপহরণ অবস্থায় আছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। তারা বিশেষ ফ্লাইটে এসেছিলেন, আর যাত্রাপথে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এই দৃশ্য তখন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এভাবে শিকল পরানোয় মানবাধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন, যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যাবাসনের সময় হাতকড়া ও শিকল পরানো উচিত নয়। সাধারণ অভিবাসীদের হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদ-ের পরিপন্থি। অভিবাসীদের এভাবে হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বিদেশে যেতে চায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় পাচারের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিক বা মেক্সিকো হয়ে ৩০-৪০ লাখ টাকা নিয়ে লোকজনকে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। নথি ঠিক না থাকলে গন্তব্য দেশ চাইলে তাদের ফিরিয়েও দিতে পারে। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। আমরা আশা করি, আগামীতে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া আরও মানবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
এফএনএসমানবজাতির জন্য শান্তির বার্তা ও আল্লাহর অসীম রহমত নিয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হিজরি ক্যালেন্ডারের রব...

জাতীয় নির্বাচনের জন্য দেড় লাখ পুলিশ পাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ
এফএনএসআগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে দেড় লাখের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে...

হাজার হাজার কোটি টাকা খরচেও বাড়েনি দেশের গ্যাসের মজুদ
এফএনএস হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাসের মজুদ বাড়েনি। বরং গ্যাস...

যারা এখন পাকিস্তানের স্লোগান দিচ্ছে তারা ’৭১-এ রাজাকার ছিলো...
সোহেল রানালিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান...

ভনেজেুয়লোয় যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, দাবি...
অনলাইন ডস্কেযুক্তরাষ্ট্ররে প্রসেডিন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভনেজেুয়লোর ভতেরে সক্রয়ি মাদক চক্রগুলোকে...

বি এন পির সমাবশেে অপু বশ্বিাস
কুষ্টয়িা প্রতনিধিিকুষ্টয়িার খোকসায় বএিনপরি ৪৭তম প্রতষ্ঠিার্বাষকিীর আলোচনা ও সাংস্কৃতকি অনুষ্ঠানে অংশ...
