কুমিল্লা লেবুচাষে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওই নারী
কুমিল্লায় বিনা লেবুচাষে লুকিয়ে আছে কোহিনুর বেগমের সমৃদ্ধির গল্প। স্বামীর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মাঝে উদ্যোক্তা হয়ে কীভাবে সন্তানদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওই নারী। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ওই কৃষি উদ্যোক্তার পরিবার। প্রবাসী স্বামী খালি হাতে দেশে ফিরলেও নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ওই নারী। বর্তমানে স্বামীর কোনো আয়রোজগার নেই। কিন্তু কোহিনুরের লেবুচাষের আয় দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে পরিবার। এদিকে ওই কৃষি উদ্যোক্তাকে অনুসরণ করছেন এলাকার অন্য নারীরা।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার যশপুরের গৃহবধূ কোহিনুর। প্রবাসী স্বামীর বিপর্যস্ত অবস্থায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েন ওই নারী। ৪ বছর আগে বাড়ির পাশের জমিতে তিনি বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করেন। কিন্তু তেমন সফলতা পাচ্ছিলেন না।একদিন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিনা লেবু-১-এর একটি প্রদর্শনীর প্রস্তাব দেন। প্রথমে কোহিনুর লেবুর বাগান করতে আগ্রহী না হলেও পরবর্তীকালে তিনি রাজি হন। লেবুর প্রদর্শনী পেয়ে বাড়ির পাশের ১০ শতাংশ জায়গায় ৪৫টি চারা লাগান। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন নিয়মিত লেবু বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আয় করছেন। প্রতি রমজানে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তিনি। এখন প্রতিমাসে বিক্রি করছেন ৩০-৪০ হাজার টাকার লেবু ও কলম।
সরেজমিন বাগানে দেখা যায়, বাগানজুড়ে বাতাসে ভাসছে লেবুর ঘ্রাণ। গাছের এক ডালে ফুল, আরেকটিতে ফল। ১২ মাসই এ লেবুর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বিনা লেবু-১ বিচিবিহীন। চমৎকার সুগন্ধ। খেতে ও স্বাদে অন্য লেবু থেকে আলাদা।
উদ্যোক্তা কোহিনুরকে জমির পরিচর্যায় সহায়তা করেন স্বামী ও ছেলে-মেয়ে। তাকে দেখে যশপুরসহ কয়েকটি গ্রামের নারীরা লেবুর চাষ শুরু করেছেন।
উদ্যোক্তা কোহিনুর বলেন, ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলাম। জমি বিক্রি করে স্বামী প্রবাসে গিয়ে পড়েন বেকায়দায়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুনের পরামর্শে লেবুবাগান করার পর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে অভিজ্ঞ করেছি। এখন লেবুর সঙ্গে সবজি, ধানচাষ ও গরু পালন করছি। আরও ৩০ শতক জমিতে লেবুর চাষ করব। আলহামদুলিল্লাহ, এখন ভালো আয় হচ্ছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বাকি দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। ছেলেকে জাপান পাঠানোর পরিকল্পনা করছি।
প্রতিবেশী নাছিমা আক্তার বলেন, কোহিনুরের লেবুচাষ দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমিও চাষ শুরু করেছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, আমি কোহিনুরকে লেবুচাষে আগ্রহী করেছি। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরবর্তীকালে তাকে বুঝিয়ে লেবুচাষে উদ্বুদ্ধ করি। বিনা লেবুর চারা লাগানোর পর ৬ মাসে ফুল ধরা শুরু করে। এখন ভালো ফলন হচ্ছে। বাড়তি আয় করে লাভবান হচ্ছে।
বিনা প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, কোহিনুর বেগম গাছ রোপণের এক বছরের মাথায় লেবু বিক্রি শুরু করেন। এখন প্রতিমাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। লেবু ও চারা বিক্রির মাধ্যমে তিনি পরিবারের অসচ্ছলতা দূরের সঙ্গে দেশের ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করছেন। তাকে দেখে অন্যরাও লেবুচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অসচ্ছল মানুষের জন্য লেবুবাগান ভাগ্যবদলের হাতিয়ার হতে পারে।
ক্যাটেগরি:
বৃহত্তর কুমিল্লা
ট্যাগ:
বৃহত্তর কুমিল্লা
জাতীয়
রাজনীতি