প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 26 Oct 2025, 12:02 AM
বরুড়ার মানুষের হৃদয়ে আস্থার আলো জ্বেলেছেন ইউএনও নু এমং মারমা মং
সুজন মজুমদার
কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলা এখন প্রতিটি সকালেই যেন একটু ভিন্ন। প্রশাসনের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে সেবার সুবাস, মানুষের মুখে উচ্চারিত হয় এক নাম—নু-এমং মারমা মং। দায়িত্ব নয়, বরং ভালোবাসার বন্ধনে তিনি জড়িয়ে নিয়েছেন পুরো উপজেলা। ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর বরুড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রমাণ করেছেন—একজন কর্মকর্তা শুধু দপ্তরের মানুষ নন, তিনি হতে পারেন জনতার আপনজনও।
সরকারি জায়গা উদ্ধার, যানজট নিরসন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদকবিরোধী অভিযান, শিশু পার্ক নির্মাণ কিংবা জলাবদ্ধতা নিরসন—সব ক্ষেত্রেই তাঁর নেতৃত্বে দেখা গেছে কর্মময় সজীবতা। মানুষ এখন বিশ্বাস করে, প্রশাসন মানেই শুধু নিয়ম নয়, মানবতার সেবাও বটে। নু-এমং মারমা মং আজ বরুড়ার মানুষের হৃদয়ে আস্থার আলো জ্বেলে দিয়েছেন। ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি—সব সীমা ছাড়িয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অক্লান্ত প্রহরী, যিনি নীরবে, নিরলসে গড়ে তুলছেন উন্নত বরুড়া।
মাদক, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং —সমাজের এই তিনটি বড় সমস্যার বিরুদ্ধে বরুড়া উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে নিরলসভাবে। ইউএনও নু-এমং মারমা মং-এর নেতৃত্বে এসব অপরাধ প্রতিরোধে প্রশাসন, শিক্ষক, অভিভাবক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং আইনগত পদক্ষেপ।
মাদক, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং —সমাজের এই তিনটি বড় সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং যোগদান থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পর্যন্ত তথা গত দুই বছরে কতটুকু ভূমিকা পালন করেছেন তিনি? এই বিষয়ে উপস্থাপন করা হলো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর আওতায় ব্যাপক অভিযান পরিচালিত করেছেন মি. মারমা। প্রথম অভিযান চালানো হয় ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ অভিযান ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর। এই দুই বছরে মোট ৩০টি অভিযানে ৩৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ১৩৮ মাস ১২ দিন কারাদণ্ড ও ২৬ হাজার ৮০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে ১৫ মাসের কারাদণ্ড, এবং সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ৫ হাজার টাকা।
মাদক অভিযান পরিচালনা প্রসঙ্গে ইউএনও নু-এমং মারমা মং বলেন, "মাদকবিরোধী অভিযান একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কোথায় মাদক সেবন হয়, কারা জড়িত—এসব বিষয়ে আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। আবার অনেক সময় হঠাৎ তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়। বিশেষ করে যেখানে নারী মাদক ব্যবসায়ী জড়িত থাকে, সেখানে ঝুঁকিও বেশি থাকে। তবে বরুড়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। সবাই এখন মাদকমুক্ত বরুড়া গড়তে একসঙ্গে কাজ করছেন।”
এই বিষয়ে ইউএনও নু-এমং মারমা মং আরও বলেন, "মাদকবিরোধী অভিযানে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। আইন অনুযায়ী শাস্তি ও জরিমানা দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। বরুড়াবাসীকে বলব—সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়তে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, পিতামাতাকে সম্মান ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি। কেউ যদি মাদক সেবন বা ব্যবসায় উৎসাহিত করে, তবে তার উদ্দেশ্যে একটাই বার্তা—বরুড়ায় তার কোনো জায়গা নেই। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি এবং সবসময় অ্যাকশনে থাকব।”
অন্যদিকে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং নিয়ে উপজেলা প্রশাসন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং তুলনামূলক খুবই কম। তারপরও প্রশাসন তাদের মত করে সচেতনতা ও অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করছেন।
বরুড়া উপজেলায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ ধারা ৮ এবং ৭ অনুযায়ী গত দুই বছরে দুটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ০৩ মার্চ ২০২৪ সালে ৫,০০০ টাকা এবং ০১ মে ২০২৪ সালে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান ও উপজেলার মহিলা বিষয়ক দপ্তরে মাধ্যমে ১০/১২ টি নিষ্পত্তি ও মুচলেকা দিয়ে সমাধান করা হয়। অন্যদিকে, গত দুই বছরে ইভটিজিং বিষয়ে ৫/৭ টি অভিযোগের ভিত্তিতে ঐগুলো নিষ্পত্তি ও মুচলেকা মাধ্যমে সমাধান করা হয়। সার্বিকভাবে, বরুড়া উপজেলায় বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং সংক্রান্ত অভিযোগ খুবই কম।
বাল্য বিবাহ ও ইভটিজিং বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, “উপজেলায় বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং সংক্রান্ত অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম। তবে এই ধরনের অপরাধ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
বরুড়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাজুড়ে এসব অভিযান পরিচালিত হয়েছে। মাদক, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা এ ধরনের কার্যক্রম তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের সহযোগিতা সর্বোচ্চ পাচ্ছি।
উল্লেখ্য, নু-এমং মারমা মং রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা রাইখালী ইউনিয়নের বড়খোলা পাড়া গ্রামের মংথোয়াইহ্লাঞো মারমা সন্তান। তাঁর পিতা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ৩৫তম ব্যাচ প্রশাসন ক্যাডারে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগ দেন।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
সালমান শাহ হত্যা মামলা, আসামিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে...
সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলায় আসামিদের দ...
মালয়েশিয়ায় নেমেই নেচে উঠলেন ট্রাম্প, ভিডিও ভাইরাল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মালয়েশিয়ায় পা রেখেই নেচে উঠলেন। তাকে স্বাগত জানাতে একদল স্থানীয়...
একটি ফোন কলের অপেক্ষা ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত বিএনপির প্রচ...
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে চলেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে...
লালমাইয়ে প্রাইভেট মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হিফজ বৃ...
কাজী ইয়াকুব আলী নিমেলসারা দেশের ন্যায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মাদ্রাসা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কুমিল...
দু'বছরে ৫০৬টি হারানো মোবাইল উদ্ধার করে আলোচনায় মুরাদনগরের এ...
সুমন সরকার, মুরাদনগর প্রতিনিধিকুমিল্লার মুরাদনগরের মানুষ এখন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মানবিক ও দায়িত্বশী...
একটি গোষ্ঠী ধর্মের কথা বলে বিএনপির বিরুদ্ধে গীবত গাইছে- হাবি...
সাইফুল ইসলামবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খাঁন সোহেল বলেছেন, আজকের অনুষ্ঠানটি একটি ব্যাক্তিক্রম...