প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 8 Dec 2025, 10:58 PM
দুই হাত নেই, তারপরও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায় আরশাদুল
মো. আনোয়ারুল ইসলাম
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া গ্রামের ১১ বছরের শিশু আরশাদুল ইসলাম। জন্ম থেকেই তার দুই হাত নেই। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই তাকে স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। শিক্ষার আলোয় নিজের জীবনকে আলোকিত করতে পা দিয়ে লিখেই নিজের পড়ালেখা শুরু করে আরশাদুল। অসাধারণ অধ্যবসায় ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে পথ চলতে শুরু করে সে। তবে তার স্বপ্নের সেই পথ আজ থমকে যাওয়ার শঙ্কায়। তিন বছর আগে রাজমিস্ত্রি বাবা সুমন মিয়ার মৃত্যুর পর থেকে আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে পরিবারে। মা মিনুয়ারা বেগম ব্রাহ্মণপাড়া সদরের একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। আরশাদুল বর্তমানে নানির কাছেই থাকেন, কিন্তু সে সংসারেরও আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আরশাদুলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার কথা থাকলেও আর্থিক সংকটে এখন সে স্কুলে যাচ্ছে না। পড়াশোনা, শিক্ষা উপকরণ, স্কুলে যাতায়াত—সবকিছুই হয়ে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আরশাদুলের মেধা, সাহস এবং দৃঢ় মনোবল সত্যিই অনুকরণীয়। সুযোগ পেলে সে অনেক দূর যেতে পারে। একদিন সে নিজেকে প্রস্তুত করে স্বপ্নের চূড়ায় পৌঁছে সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক সরকার বলেন, ছেলেটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ অসাধারণ। যদি সহযোগিতা পায়, সে অনেক দূর যাবে।
নিজেই ভবিষ্যতের স্বপ্নে চোখ ভাসিয়ে আরশাদুল বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করতে চাই। পড়াশোনা করে আমি আমার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে চাই। কিন্তু মা আর নানি আমাকে আর পড়াতে পারছেন না।’
আরশাদুলের নানি কোহিনূর বেগম বলেন, ‘অর্থের অভাবে এখন আর আরশাদুলকে স্কুলে পাঠাতে পারছি না। ছোট থেকে পালছি ওকে, ব্র্যাক স্কুলে পড়িয়েছি। কিন্তু আর এগিয়ে নিতে পারছি না। একটু সহযোগিতা পেলে তাকে পড়াশোনা করানো সম্ভব।’
শিদলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, ‘সে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। সরকার বিনা মূল্যে বই দেয়। পড়াশোনায় যদি আর্থিক সমস্যা হয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করব। ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও সুযোগ থাকলে সাহায্য দেওয়া হবে।’
সহযোগিতার হাত কেউ বাড়িয়ে দিলে আবারও স্কুলে ফিরতে পারে আরশাদুল। তার স্বপ্নের পথ থেমে যাওয়ার আগেই যদি পাশে দাঁড়ায় সমাজের বিবেকবান মানুষেরা, তাহলে একদিন সে নিজ শক্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে প্রেরণা হয়ে উঠবে হাজারো প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য। হতাশা নয় বরং আশা আর সম্ভাবনার আলোয় মুখ তুলে তাকাতে চায় আরশাদুল। তার একমাত্র অপেক্ষা, কেউ সামনে এগিয়ে এসে তাকে চলার নতুন পথ দেখাবে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
প্রার্থী নয়, মার্কাতেই ভরসা রাখতে বললেন তারেক
রূপসী বাংলা ডেক্সবিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্র...
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় হাজী আমিন...
৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামন...
উৎসবমুখর আয়োজনে কুমিল্লা মুক্ত দিবস উদযাপিত
অশোক বড়ুয়াবর্ণাঢ্য আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। ১৯৭...
মুরাদনগরে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ টাকা...
বেলাল উদ্দিন আহাম্মদকুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেন চলছে টাকার ‘নীরব ল...
খাদ্য মজুদ যেটুকু থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আছে কুমিল্লায় খ...
মাহফুজ নান্টুখাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন-দেশে বর্তমানে সাড়ে ১৪ লাখ টন চাল,গেল বছর এ সময় ছ...
দেবিদ্বারে হাসপাতাল ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে কর্মবিরতি,...
মোঃ আক্তার হোসেনকুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সদরে আল মদিনা জেনারেল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে সন্ত্রাস...