
প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: জাতীয় | প্রকাশ: 22 Oct 2025, 11:44 AM

এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি-ড. ইউনুস

চারপাশে বৈরী, প্রতিকূল পরিস্থিতি। নিত্যনতুন ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলছে। রাজনীতির মাঠে অনৈক্য আর বিভক্তির কালো ছায়া। কিন্তু এসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত বন্দরে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কান্ডারি। জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি সব বাধা অতিক্রম করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস লক্ষ্যে অবিচল। সংকল্পে অটল। জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সব ধরনের উসকানি উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে ড. ইউনূস নিয়ে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের পথে, নির্বাচনের দিকে। প্রধান উপদেষ্টার এটাই বর্তমান দায়িত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শেষ কাজ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজনে বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই সৃষ্টি হচ্ছে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও সংকট। কিন্তু শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব এসব সমস্যা মোকাবিলা করছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি-এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ড. ইউনূস।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার আগে ও পরে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মিরপুর কেমিক্যাল গুদাম থেকে আগুনের ঘটনা। চট্টগ্রামের ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং সবশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করেছে। বেশির ভাগ মানুষই মনে করে, নির্বাচন বানচাল এবং দেশ অস্থিতিশীল করতেই এসব পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। এ তিনটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় রকমের আঘাত হেনেছে। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ধৈর্যের সঙ্গে। আতঙ্ক না বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
অতীতে এক ধরনের দুর্ঘটনা বা নাশকতায় আমরা দেখেছি সরকার সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দোষারোপের রাজনীতি করেছে। তদন্ত শুরুর আগেই ঘটনার দায় বিরোধীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কখনো এ রকম দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ, চলে ধরপাকড়। সরকারের এ ধরনের অতিউৎসাহী আচরণের কারণে তদন্ত নিরপেক্ষতা হারায়। প্রকৃত সত্য আড়াল হয়ে যায়। ড. ইউনূস সরকার সেই অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। সব দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলছেন না। বিশেষ করে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের পর বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য ছিল অত্যন্ত ধীরস্থির এবং দায়িত্বশীল। এ ঘটনা ড. ইউনূস সরকার রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়নি।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ছিল নির্বাচনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ সনদ স্বাক্ষর কেন্দ্র করেও হয় নির্বাচন অনিশ্চিত করার চেষ্টা। অনুষ্ঠানের আগে থেকেই এনসিপি ঘোষণা করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তি ছাড়া তারা এতে স্বাক্ষর করবে না। এ রকম অবস্থায় ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরেই ড. ইউনূস ঐকমত্য কমিশনে যোগদান করা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ১৫ অক্টোবরের বৈঠকে এনসিপি এবং জামায়াত যার যার অবস্থান থেকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি করে। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনি ভিত্তি ছাড়া তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। প্রধান উপদেষ্টা সবার কথা শুনলেন। কিন্তু নিজেকে এ বিতর্কের বাইরে রাখলেন। তিনি এনসিপি এবং জামায়াতের বক্তব্যের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে বুঝিয়ে দিলেন, ছোটখাটো এসব মতপার্থক্য থাকবেই। সেটা আমলে না নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে ঐক্যের আবহকেই প্রাধান্য দিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সুস্পষ্ট একটি বার্তা দিলেন। তা হলো, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবেই। একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করতে তিনি যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন, তা সবাইকে জানিয়ে দিলেন। এরপর ১৭ অক্টোবর সকাল থেকে কী হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। জুলাই যোদ্ধাদের আন্দোলন, এনসিপির স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন-এসব ছাপিয়ে ২৪টি রাজনৈতিক দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের ঘটনা সব আলো কেড়ে নেয়।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। এনসিপি ও জামায়াত এখন মুখোমুখি। গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনৈক্য আর অবিশ্বাস রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এ নিয়ে দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও হতাশা লক্ষ করা যাচ্ছে। সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পর একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটা আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা যখন চারদিকে দেখছি আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেকে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি একটা অনৈক্যের সুর।’ বিএনপি মহাসচিব যেন কোটি মানুষের মনের কথা বলছেন। রাজনৈতিক অনৈক্য জন্ম দিচ্ছে নানান গুজব।
সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়ার একটি ফেসবুক পোস্ট নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার আরও এক-দুই বছর থাকবে বলে দাবি করেছেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার আরও এক-দুই বছর থাকবে। তারপর নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতা আরোহণের সম্ভাবনা। বিএনপি পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না তা নির্ভর করবে কিছুটা ভারতের কৌশলগত অবস্থানের ওপর এবং কিছুটা আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন ও শক্তি সঞ্চয়ের ওপর। যদি বিএনপি তার বিরুদ্ধে পরিচালিত পরিকল্পিত সহিংসতাবিরোধী আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয় তবে ওয়ান-ইলেভেনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।’
নিজের ফেসবুকে ‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ শিরোনামে এক ধারাবাহিক লেখার শেষ অংশে সোমবার প্রকাশিত পোস্টে তিনি এমনটা দাবি করেছেন। ইকবাল করিম ভূইয়া তাঁর ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘অদক্ষতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে অথবা ছাত্রচাপের মুখে সংস্কার মিশনে হাত দিলে, নির্বাচন না হয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তখন দুর্বল মন্ত্রীরা বদলাবে এবং ড. ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট করে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠিত হবে।’ এভাবেই নানা জনের নানা মত জনগণের মধ্যে সৃষ্টি করছে বিভ্রান্তি। কিন্তু দেশের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সঠিক পথেই এগোবে। সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস তাঁর কথা রাখবেন। একটি বিতর্কহীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নবযাত্রা করবে। সেই লক্ষ্যে তিনি অবিচল। ড. ইউনূস জানেন, এটাই সম্ভবত তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তিনি এও জানেন, এ পরীক্ষায় তাঁর নেতৃত্বে উত্তীর্ণ হতে হবে বাংলাদেশকে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
হলান্ডের রেকর্ডের রাতে ম্যানসিটির সহজ জয়
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে এক ম্যাচ পর জয় ফিরল ম্যানচেস্টার সিটির ঘরে। মঙ্গলবার রাতে ভিয়ারিয়ালের...
ক্যালিফোর্নিয়ায় ফুটবল মাঠে বিমান বিধ্বস্ত
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ফুটবল মাঠে ছোট একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গল...

খানাখন্দে ভরা ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোড ঝুঁকি নিয়ে চলছে য...
আয়েশা আক্তারপুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানা-খন্দক। দীর্ঘ...

ভুয়া ফেসবুক আইডিতে ব্রাহ্মণপাড়া থানার নাম ব্যবহার, বিভ্র...
মো. আনোয়ারুল ইসলামকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডির নামে একটি ভূয়া ফেসবুক আইডি খুলে...

চান্দিনায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়...
সোহেল রানা, চান্দিনাকুমিল্লার চান্দিনায় ভুয়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার নামে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়...

চৌদ্দগ্রামে কানাইল খাল খননের ফলে সুবিধা পাবে কৃষক প্রশংসা...
এমরান হোসেন বাপ্পিকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ কানাইল খাল খনন ও খননকৃত খালের পাড়ে বিভিন্ন প্রজ...
