প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 30 Oct 2025, 8:22 AM
স্কুলের পাশে ময়লার ভাগাড় রেকর্ড হারে কমেছে শিক্ষার্থী
মাসুদ রানা, কুমিল্লা
কুমিল্লা লালমাই উপজেলার ভুশ্চি বাজারে অবস্থিত ছোট শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ফেলা হচ্ছে বাজারের ময়লা-আর্বজনা। ময়লার দুর্গন্ধে পড়াশোনা করতে এবং বিদ্যালয়ের মাঠে খেলতে অসুবিধা হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। প্রতিনিয়ত ময়লার ভাগাড় থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধ ও দূষিত পরিবেশের কারণে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। ধ্বংসের পথে এখানকার শিক্ষার পরিবেশ। ক্লাস রুমের ভেতরে দুর্গন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। যার ফলে প্রতিটি শ্রেণী কক্ষে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, পরিবেশগত কারনে অভিভাবকদের অনিহা জন্মেছে স্কুলের প্রতি, কেউ এখন আর শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতেও চায় না। তাছাড়া, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় মাঠের মধ্যে দিনভর অটোরিকশা পার্কিং অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে।
বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাবরীনা বাড়ি কাঁচিয়াপুকুরিয়া নিয়মিত ক্লাসে আসনে। কিন্তু দুর্গন্ধে সেও অসুস্থ হয়ে পরেছেন। চতুর্থ শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী মোজাম্মেল ও অন্যান্য সহপাঠীরা মিলে নাকে হাত দিয়ে খেলাধুলা করতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়টিতে এখন প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পরিবেশ দূষনের কারনে অনেক শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকে শ্বাস কষ্টের মতো রোগেও ভোগছেন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে যাও একজন ছিল সে মাদক মামলায় জেলে যাওয়ার পরে বের হয়ে আর বিদ্যালয়ে আসেনা।
বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্কুল ছুটি বা বন্ধ হলেই রাতের বেলা বাজারের কিছু ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির বর্জ্য, মাছের বর্জ্য, কাগজ, পলিথিন, উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা বর্জ্য এখানে ফেলে যায়। অনেক সময় তারা ময়লার ভাগাড়ে বর্জ্য না ফেলে তাড়াহুড়ো করে মাঠরে মধ্যেও ফেলে যায়। নিষেধ করলেও কেউ বাঁধা মানছে না। এসব থেকে আসা দুর্গন্ধে স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারে না। আমরাও দুর্গন্ধে এদিক দিয়ে হাঁটতে পারিনা।
ছোট শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়া বলেন, বিদ্যালয় ঘেঁষে ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে আমরা এই সমস্যায় ভুগছি। সাধারণ সময়ে তো বটেই, আরও প্রকট অবস্থা হয় রোদ ও গরমে। ময়লার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মারাত্মক অসুবিধা হয়। এই ভাগাড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে এবং পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। খোলামেলা অবস্থায় এসব আর্বজনা ফেলায় দুর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসুস্থবোধ করছে। মাঠের পাশে খেলনা স্থাপন করা হলেও বাচ্চারা খেলতে পারছে না। বিষয়টি অতীতেও উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাজার পরিচালনা কমিটি ইজারাদারসহ সকলকে বার বার বলা হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুশ্চি বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ভুশ্চি পূর্ব বাজার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দক্ষিণে পাশে পুকুরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। মূলত সেখানেই ময়লা ফেলা হয়। মাঝখানে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় পুকুর ভেসে ময়লা চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ায় কিছুদিন স্কুলের পাশে ময়লা ফেলেছিল ব্যবসায়ীরা। আমরা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের নিষেধ করে দিয়েছি। এখন আবার নির্ধারিত স্থানেই ময়লা ফেলা হয়। স্কুলের সীমানা প্রাচীর নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সাথে স্কুলের জমি নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। তবে এখন জমিসংক্রান্ত ঝামেলার বিষয়টি সমাধান হয়েছে। স্কুল সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে এখন আর স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাফর আল সাদকে বলেন, স্কুলের বাউন্ডারি (সীমানা প্রাচীর) না থাকায় স্কুলটা ছুটি হলেই মাঠে গাড়ি পাকিং, বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান বসে এবং কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই স্কুলের পাশে ময়লা ফেলে। সত্যিকার অর্থে স্কুলের বাউন্ডারিটা তৈরি হলেই এখানে আর ময়লা ফেলা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগটা থাকবে না। স্কুলের জমির সাথে ব্যক্তিমালিকানা জমির বিরোধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে অতীতের কয়েকজন ইউএনও স্যার, বর্তমনা ইউএনও স্যার সরেজমিনে গিয়েও সকলের সাথে কথা বলে স্কুলের বাউন্ডারি তৈরির চেষ্টা করলেও ঠিকাদারকে কাজ করতে বাঁধা দেওয়া হয়।
লালমাই উপজলো নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা বলেন, ময়লা আর্বজনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও অধিকাংশ মানুষই নির্ধারিত স্থানে ময়লা আর্বজনা ফেলার বিষয়ে সচেতন না। স্কুলটি বাজারের পাশে অবস্থিত হওয়ায় বাজারের সকল ময়লা আর্বজনা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে স্কুলের পাশে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সবাইকে ময়লা আর্বজনা সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হবে। এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে আমরা অবগত নয়। যেহেতু আপনার মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছি অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
চৌদ্দগ্রামে বিপুল পরিমান ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ যুবদল নেতা আট...
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধিকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্...
কুমিল্লা নগরীতে ছিঁচকে চুরির হিড়িক!
মাহফুজ নান্টুভাই চোরের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি, বাসার ডিসের তার, দরজার সামনে জুতা সবই নিয়ে যাচ্ছে। প...
ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ...
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা ) প্রতিনিধিকুমিল্লা নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের আয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক,...
কুবিতে 'প্রভাতী'র উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন
কুবি প্রতিনিধিকুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সামাজিক সংগঠন 'প্রভাতী'র উদ্যোগে স্বা¯’্যসচেতনতা বৃদ্ধ...
গোমতীর চরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য পাচ্ছে না কৃষক, লাভ গুণছে ফ...
মো. জাকির হোসেনকুমিল্লার শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত গোমতীর কুমিল্লা আদর্শ সদর, বুড়িচং উপজেলার চরাঞ্চল...
তিতাসে ২৪-এর রঙে গ্রাফিতির প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ
নাজমুল করিম ফারুক কুমিল্লার তিতাসে জুলাই গণঅভ্যূত্থান বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ২৪-এর রঙ...