কুমিল্লা দক্ষিণ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনী আসন কুমিল্লা ১০ এলাকা। ভৌগলিক কারনে নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা একত্রিত হওয়াতে এই আসনের আয়তন অনেক বেশি। যদিও সাবেক আ'লীগ সরকার আমলে তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল এই আসন। কিন্তু আসন সংষ্কার করে দেশের অন্যান্য কয়েকটি আসনের মতোই তা পূনবিন্যাশ করা হয়েছে। তারমধ্যে, নাঙ্গলকোট উপজেলার আয়তন ২৫৫.৯৫বর্গ কি.মি, একটি পৌরসভা, ১৬টি ইউনিয়ন, ২৯০ টি গ্রামে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষাধিক, তারমধ্যে মোট ভোটার ৩,৫৬,৫৪৯ জন, নারী ভোটার ১,৭৩,১৪০ জন,পুরুষ ভোটার ১,৮৩,৪০৮জন, তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার ১ জন।
এদিকে ২০১৭ সালে গঠিত লালমাই উপজেলায় বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ২লক্ষ ৩০ হাজার, আয়তন ৯৭ বর্গ কি.মি. ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১,৭২,২২৬ জন, তারমধ্যে নারী ভোটার ৮৪,৩৪৭জন, পুরুষ ভোটার ৮৭,৮৭৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন।
কুমিল্লা ১০ আসনে ধানের শীষে নাঙ্গলকোট উপজেলা থেকে বিএনপির প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে সাবেক এমপি আব্দুল গফুর ভূইয়া ও ২০০৮ সালে ধানের শীষের প্রার্থী মোবাশ্বের আলম ভূইয়া। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থিত লোকজনও প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে এখানে এছাড়াও, ইতিমধ্যে মনিরুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষনাও করেছে লালমাই উপজেলা বিএনপি।
অপরদিকে, জামায়েত ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিনিয়ত ভোটারদের কাছে দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছেন মাও. ইয়াছিন আরাফাত, জামায়েতের পক্ষথেকে কোন প্রকার গ্রুপিং ছাড়া সুশৃঙ্খলভাবে চলছে তাদের প্রচার প্রচারনা। এছাড়াও, এনসিপি থেকে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় এনসিপির যুগ্ন সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। ফেইসবুকে কুমিল্লা ১০ নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষনা দিয়েছেন লালমাই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের এফসিএ মোস্তফা সাজ্জাদ।
সাবেক এমপি আব্দুল গফুর ভূইয়া ২০০১ সালে বিএনপি থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা ১১ আসন নাঙ্গলকোটের এমপি ছিলেন, তিনি লাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। সম্পূর্ণ নাঙ্গলকোট জুড়ে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। আ'লীগ সরকারের আমলে লাখো বিএনপির কর্মীবাহিনী নিয়ে লোটাস চত্বর ভাংচুর সহ দলের দূরদিনে মাঠে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হবেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমার জনপ্রিয়তা পূর্বের চেয়ে অনুক বেড়েছে। অনেকে অনেক কথা বলবে। ২০০৮ সালে ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাকে ডেকে নিয়ে নমিনেশন দিয়েছে কিন্তু কুমিল্লা নির্বাচন কমিশন আমার মনোনয়ন বৈধ করে অথচ, ৫০ লক্ষ টাকা দিয়া ঐসময় আমার মনোনয়ন বাদ দেওয়া হয়েছিল। আর তখনকার নির্বাচনে আমি ধানের শীষে ভোট দিয়েছি যা অনেকেই দেখেছে। তাছাড়া, আমার বিরুদ্ধে বলে যে আমি লোটাস কামালের বিজনেস পার্টনার কিসের বিজনেস পার্টনার? ২০২২ সালের ৩১ আগষ্ট লোটাস চত্বর, শেখ মুজিবের মুড়াল, শেখ হাসিনার মুড়াল ১০০ ফিট লম্বা ডালাই করা টাইলস্ সিমেন্টের এইটা ভাঙ্গছে কে ঐদিন মোবাশ্বের আলম কোথায় ছিল? সেতো ২০১৯ সালে প্রদত্যাগ করে চলে গেছে দল থেকে, এখন সে বলে এই আসনের মালিক! কোথায় ছিল সে ৩১ আগষ্ট ৪০ হাজার কর্মী নিয়ে আমি মাঠে ছিলাম। ৩টা মামলার আসামী হয়েছি। সে ঐ মামলার আসামি হয়েছে কিনা? এখন মালিক দাবি করে। ঢাকা চট্রগ্রাম রোডে বিএনপির লং মার্চে আমি গফুর ভূইয়া ৩০০ পিকাপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি নিয়ে লাকসামের উপরদিয়ে কর্মীবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়েছি সে দিন কোথায় ছিল মোবাশ্বের? আল্লাহ ভরসা নাঙ্গলকোট যেদিকে যাবে সেদিকেই এমপি হবে। মনিরুল হক চৌধুরী সাহেবের দোয়া নিয়ে আমি লালমাই প্রতিটা ইউনিয়নে যাবো।
মোবাশ্বের আলম ভূইয়া ২০০৮ সালে কুমিল্লা ১০ নির্বাচনী এলাকা থেকে ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ২০০৮ সালে। তিনি লাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। তার নাঙ্গলকোট উপজেলায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাশাপাশি লালমাই উপজেলার মানুষদের সাথে গত রোজায় ইফতার থেকে শুরু করে বহু সংখ্যক প্রোগ্রামেও অংশ নিয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে কুমিল্লা-১০ নির্বাচনী আসনে মনোনয়ন চাইবেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকে পর্যন্ত মোবাশ্বের আলম ভূইয়া কুমিল্লা ১০ নির্বাচনী আসনের ধানের শীষের প্রার্থী চূড়ান্ত কাইলকা কি হয় জানিনা। গত ১৭ বছর কালমা দিছি ১ মিনিটের লাইও কর্মীও ছাড়িনো মাঠও ছাড়িনো। ঢাকা থেকে ছাগনাইয়া পর্যন্ত মোবাশ্বের আলম ভূইয়ার বিচরন। তাই এইটা আমার অধিকার। এটা কোন দয়া নয়। আমি কামলা দিছি তাই বলছি আমি নিশ্চিত আমাকে নমিনেশন দিবে দল। আর আমার চাইতে কেউ যদি কামলা বেশি দিয়ে থাকে দল তাকে দিবে। মনিরুল হক চৌধুরী বক্তৃতা দিলে গফুর-গা নৌকায় ভোট দিছে। অন গফুর-গার লগে আরে মিলাইলেতো হইতো নো। নৌকূয় ভোট দিন্না বুঝি নমিনেশন পাইবো! আমি দলের কাছে নমিনেশন চাইবো এবং পাবো এইটা আমার অধিকার। আর মনোনয়ন লই চুদোরভুদুর চলতো নো। আই যেদিন জীবনের যৌবন কাটাইছি জেলখানায় হে দিন হেতারা কোন আছিল? মনিরুল হক চৌধুরী ১৭ বছর ঐক্য সংহতি করেছে। ওনি জাতীয় নেতা আসন হবে ঢাকা মতিঝিল আসন। নাঙ্গলকোট আপনার জনপ্রিয়তা কেমন জবাবে, তিনি বলেন, আমার কোন জনপ্রিয়তা নেই তবে, আমি জনপ্রিয় দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো।
সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী খুবই বিচক্ষণ একজন রাজনৈতিক নেতা কর্মদক্ষতা ও তার ভালবাসার মোহে পরে দিনরাত এক করে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পূর্ণবহালের দাবিতে লাখো মানুষ আন্দোলনেও নেমেছিল। কিন্তু সংষ্কার কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা বাস্তবায়িত হয়নি। মনিরুল হক চৌধুরী সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপির এমপি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দা। কুমিল্লা-৯ এ উন্নয়নমূলক কাজও করেছিলেন অনেক যার ফলে, লালমাই উপজেলায় তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি নাঙ্গলকোট উপজেলায়ও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। কুমিল্লা-১০ নির্বাচনী আসনে নির্বাচন করবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাঙ্গলকোট এবং লালমাই উপজেলা বিএনপি যদি চায় আমি কুমিল্লা ১০ আসনে নমিনেশন চাইবো।
জামায়েত ইসলামীর একক প্রার্থী মাও. ইয়াছিন আরাফাত প্রতিনিয়ত পাড়া মহল্লায়, উঠান বৈঠক, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। দিনরাত এক করে মানুষের দৌড়গড়ায় নিজের সংগঠনের লোকদের সাথে নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়াও হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষদের আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন।ইয়াছিন আরাফাত কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। জনপ্রিয়তার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা উপজেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ড সম্মেলন করেছি। মহিলা সমাবেশ করেছি। মানুষের সুখে দুঃখে অতীতের ন্যায় আমরা পাশে রয়েছি। বেশির ভাগ জায়গায় আমরা মানুষের মৌখিক সম্মতি পাচ্ছি। আমরা যেভাবে মাঠে যাচ্ছি এবং মানুষের কথা শুনছি তাদের সম্মতিতে আলহামদুলিল্লাহ আমরা আশা করতে পারি কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের পরে কুমিল্লা ১০ আসনে বিজয় লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।