কুমিল্লায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেমনে থামছেনা কোন ট্রেন
আয়েশা আক্তার
রেলপথে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। নানা অব্যস্থাপনায় বছরের পর বছর চলতে থাকা একটি লাভজনক সেবামুলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে।এদিকে গত একদশকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার লাকসাম জংশন থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়া জংশন পর্যন্ত কুমিল্লা অংশে ৮ টি ষ্টেশন আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু ময়নামতি, আলীশ্বর এই দুটি ষ্টেশন বর্তমানে কোন ট্রেন থামছে না। এককথায় নেই কোন কার্যকারিতাও। ফলে ষ্টেশন দুটিতে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি গেট ম্যানও নেই। প্রায় শতকোটি টাকার বিনিময়ে স্টেশনটি সম্পন্ন হলেও একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি ময়নামতি রেলওয়ে ষ্টেশন এর ৮টি কক্ষ রাতের আধাঁরে অজ্ঞাত চোরের দল তালা ভেঙ্গে মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়।
জাতীয় প্রধান ঢাকা চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা অংশের কিছু এলাকা দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। রেলওয়ে বাংলাদেশের জনবল থাকার পরও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নিয়মিত মালামাল চুরির ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এই এলাকায় রেলপথ। অল্প কদিন আগে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশনের ৮টি কক্ষের তালা ভেঙ্গে মূল্যবান যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যায়। বিগত ২০২৪ সালের মার্চে কুমিল্লার আলীশ্বর, লালমাই, ময়নামতি, কুমিল্লা ও রসুলপুর রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন রেলপথ থেকে খুলে নিয়ে যায় কমপক্ষে ৩৯টি মুল্যবান মোটর। এভাবে প্রতিনিয়ত রেলপথ থেকে খুলে নিয়ে যাচ্ছে ক্লীপ। এতকিছু ঘটনার পরও ধরাছোয়ার বাইরে অপরাধীরা। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারী এই সম্পদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ কি? কেন নেই কোন অগ্রগতি, জনগুরুত্বপূর্ণ এই চুরির ঘটনায় অপরাধী আটকে?
জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের অনেকটা মাঝামাঝি এলাকায় কুমিল্লার অবস্থান। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত এই ষ্টেশন হয়ে ২৩ টি আন্তনগর, এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন' চলাচল করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সরকার রেলপথে দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লার লাকসাম জংশন স্টেশন থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়া জংশন পর্যন্ত প্রায় ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান করে। একই সময়ে কুমিল্লা অংশের গুরুত্বহীন আলীশ্বর, লালমাই, ময়নামতি, সদর রসুলপুর রেল ষ্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দন করা হয়। বলে রাখা ভালো উল্লেখিত স্টেশনগুলোতে কোন যাত্রীবাহী ট্রেনের বিরতিও নেই। কালে ভদ্রে দু/একটি মালবাহী ট্রেন যাত্রাবিরতি করে। অজ্ঞাত কারণে রাষ্ট্রীয় কোটি কোটি টাকা খরচ করে পুরাতন ষ্টেশনগুলো ভেঙ্গে নতুন এই সব রেলওয়ে ষ্টেশন নির্মান করা হলেও প্রথমত এইসব ষ্টেশনগুলোতে ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায় যাত্রীদের পদচারনা একেবারেই নেই। ষ্টেশনগুলোতে দেখা যায় না কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি সাথে নেই ষ্টেশন রক্ষনাবেক্ষন বা নিরাপত্তায় কোন কার্যকর ব্যবস্থা। ফলে এসব ষ্টেশনগুলোতে বখাটে, মাদকসেবী, ভবঘুরে, আশ্রয়হীন মানুষের সাথে ভীড় বাড়ছে নানা অপরাধী চক্রেরও। সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে তেমনি অরক্ষিত থাকা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাভুক্ত ময়নামতি রেলওয়ে ষ্টেশনটিতে চোর বা দুষ্কৃতিকারী হানা দেয়। প্লাটফরমের ৮টি কক্ষের তালা ভেঙ্গে মুল্যবান বৈদ্যুতিক তার সরঞ্জাম, আইপিএস, ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কুমিল্লা রেলওয়ের সিনিয়র সাব এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আহম্মেদ মামলা করতে গড়িমসি শুরু করে। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করে। সাংবাদিকরা এসময় তার কাছে চুরি সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি বিষয়টি তেমন আমলে নেন নাই। সর্বশেষ তার বক্তব্য, চোরেরা মাত্র ২১ হাজার ৮'শ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। বাকী বিষয়ে তথ্য নিতে লাকসাম বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ফোরম্যান কিশোর কুমার ত্রিপুর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রথমে জানান, ডাবল লাইন প্রজেক্টে কাজ করা ম্যাক্স এখনো আমাদের কাছে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। এটা প্রজেক্টের মালামাল। পরে অবশ্য শিকার করেন এবং জানান, জেনারেটর কক্ষ থেকে প্যানেলবোর্ডের তার চুরি করেছে। প্রশ্ন হলো সরকারী সম্পত্তি চুরি বা মিসিং হলো। এগুলো রক্ষনাবেক্ষনের দায়দায়িত্ব কার? আর কেনইবা মামলা করতে এত গড়িমসি এবং দেরী। এছাড়াও রেলপথ থেকে বিভিন্নস্থানে প্রায়ই চুরি হচ্ছে ক্লিপ। বিগত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কুমিল্লার আলীশ্বরও, লালমাই, ময়নামতি, কুমিল্লা প্রধান ষ্টেশন ও রসুরপুর ষ্টেশন এলাকার আশপাশ থেকেও মুল্যবান মোটর চুরি হয়ে যায়। গত এক বছরেও এই চুরির কোন কুলকিনারা করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মোটরগুলো চুরির কারণে চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্রেনগুলো গত এক বছরে সেই মোটর সংযুক্ত থাকা রেলপথ ব্যবহার করে চলাচল করতে পারেনি।
এদিকে জেলার অন্যতম প্রাচীন উল্লেখিত রেলওয়ে ষ্টেশন দুটি আধুনিকায়নের পরও যাত্রীবাহী কোন ট্রেন বিরতি না থাকায় যাত্রীরা হতাশ। আর এই অবস্থায় অরক্ষিত ভাবে থাকা ষ্টেশনের বাইরে লাকসাম থেকে রাজাপুর ষ্টেশন এলাকায় রেলপথ থেকেও ক্লীপ, মোটরের ঢাকনা, পাথর ইত্যাদি চুরি হচ্ছে নিয়মিত। কুমিল্লা প্লাটফরমে কথা হয় বাগিচাগাঁও এলাকার আইনুল, ফারুক, কবিরসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে। তারা বলেন, সরকার বিপুল টাকা ব্যয়ে রেলপথের উন্নয়ন করলেও পর্যাপ্ত ট্রেনের অভাবে কাঙ্খিত গন্তব্যে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও এই রেলপথের ময়নামতি ষ্টেশন'এ যাতায়াতে কোন রেল সুবিধা না থাকায় জাঙ্গালীয়া আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটিতে স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করা যাচ্ছে না।
ক্যাটেগরি:
বৃহত্তর কুমিল্লা
ট্যাগ:
বৃহত্তর কুমিল্লা
জাতীয়
আন্তর্জাতিক
রাজনীতি