প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 25 Nov 2025, 11:29 PM
রস সংগ্রহের নামে খেজুর গাছের অতি-নিধন পরিবেশ ও আবহাওয়ায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা
নেপাল চন্দ্র সাহা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা সহ আশে পাশের উপজেলাগুলোতে শীতকালে খেজুর রস সংগ্রহ ছিল একসময়ের গ্রামীণ ঐতিহ্য। কিন্তু এখন সেই রস সংগ্রহের পেছনে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে খেজুর গাছ। রস সংরক্ষণ ও অতিরিক্ত রসের লোভে অনভিজ্ঞ ও কিছু অসাধু গাছিরা নির্বিচারে গাছ কাটছে, গভীর করে চেরা দিচ্ছে। ফলে বছরের পর বছর অপ্রকৃত পদ্ধতিতে রস তোলার কারণে গাছগুলো দ্রুত মারা যাচ্ছে এবং পরিবেশ-প্রকৃতি চরম বিপাকে পড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুইুতিন বছরে এ অঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহ প্রক্রিয়া প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এখনও যেখানে কিছু খেজুর গাছ টিকে আছে, সেগুলোরও সঠিক পরিচর্যার ঘাটতি রয়েছে। অনভিজ্ঞ গাছিরা রস বেশি পাওয়ার আশায় একই গাছে একাধিক গভীর চেরা দিচ্ছেন ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে পেশাদার গাছিদের পেশা হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রস সংগ্রহ পদ্ধতিতে গাছের আয়ুও কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, রস সংগ্রহের নামে যে ভাবে গাছ নিধন চলছে, তা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। খেজুর গাছ শুধু রসের উৎস নয়; এটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং শীতকালে জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রতিদিনই অদক্ষ হাতে গাছ কাটার কারণে সবুজায়ন কমে যাচ্ছে। এতে শীতের তাপমাত্রা পরিবর্তন, কুয়াশার মাত্রা কমা, স্থানীয় আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক ওঠানামা দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে কিছু অসাধু ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে—তারা জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করছেন, যা গাছ নিধনকে আরও ত্বরান্বিত করছে। ফলে রস সংগ্রহ তো দূরের কথা, গাছের অস্তিত্বই টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, যদি এখনই রস সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও সচেতনতা বৃদ্ধি না করা হয়, তবে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যেই এ অঞ্চলে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে খেজুরের রস সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করতে পাড়াই নিশাচর পাখি ও সরীসৃপ প্রাণী অবাদে পাত্র থেকে পান করার ফলে নানান জীবানু রসের সাথে ছড়িয়ে মানবদেহের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে তাই যেন তেন গাছির রস সংরক্ষণ ও পাণ করাটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান ভূইয়া ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক পরিচর্যা এবং রস সংগ্রহের প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে গাছ কাটতে দেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত রসের আশায় গাছ হত্যা করলে তা শুধু ঐতিহ্যের ক্ষতি নয় এটি সরাসরি জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। গ্রামীণ জনপদের মানুষদের আক্ষেপ, রস সংরক্ষণ যাদের আয়-রোজগারের পথ খুলে দিত, আজ তাদের ভুল পদ্ধতির কারণেই গাছই হারিয়ে যাচ্ছে।” তাই এখনই কঠোর ব্যবস্থা ও যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বই থেকেই খেজুর রসের ঐতিহ্য জানতে পারবে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
কুমিল্লায় নতুন পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুজ্জামান
নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা জেলা থেকে বদলি হয়ে কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদায়ন হয়েছেন বিসিএস...
চৌদ্দগ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্য...
মাহফুজ নান্টুকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় দুইজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে...
লালমাইয়ের বেলঘর ইউপি সচিবের স্বেচ্ছাচারিতায় ভোগান্তিতে মান...
মাসুদ রানা, কুমিল্লাকুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউপি পরিষদের সচিব ফরিদা আক্তারের স্বেচ্ছাচা...
গ্রীষ্মের ফুল ফুটল হেমন্তে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বরুণের অ...
মো. আনোয়ারুল ইসলামকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রকৃতি যেন নিজ আইন ভুলে গিয়ে রচনা করেছে এক বিরল দৃশ্য। গ্...
কুমিল্লা কারাগারে নারী দর্শনার্থী গাঁজাসহ গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক নারী দর্শনার্থীকে গাঁজাসহ আটক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। ম...
মানসম্মত শিক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে মিথ্যার বিরুদ্ধে...
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি একটি বিভ্রান্তিকর সংবাদ সামাজিক যোগ...