প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 10 Dec 2025, 11:22 PM
সম্মানজনক চাকরি পেলেন চীনে দারিদ্রতা-সংগ্রাম হার মানাতে পারেনি ব্রাহ্মণপাড়ার রিমাকে
মো. আনোয়ারুল ইসলাম
জীবনযুদ্ধের পথ কখনোই সহজ ছিল না রিমা আক্তারের। মাত্র ছয় মাস বয়সে বাবাকে হারানো, দরিদ্র পরিবার, শিক্ষা খাতে সহযোগিতার অভাব—সব মিলিয়ে সামনে ছিল কঠিন পথ। তবু হাল ছাড়েননি তিনি। অবিচল ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে এগিয়ে গেছেন নিজের স্বপ্নের পথে। পৌঁছে গেছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডগ্রাপাড়া গ্রামের রিমা আক্তার (২৫)। বাবা মৃত আব্দুর রশিদ ও মা শেফালী বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। অল্প বয়সেই দুই ভাইকে হারানো, বোনদের পড়াশোনায় সুযোগ না পাওয়া—এসব কঠিন বাস্তবতার মাঝেও রিমা ছিলেন অন্যরকম। অর্থনৈতিক অভাব, সামাজিক কটূক্তি কিংবা পারিবারিক অনীহা—কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পেলেও শিক্ষকদের উৎসাহ ও কিছু দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সহযোগিতা, আর নিজের অদম্য শ্রম—এই সবকিছুর শক্তিতে এগিয়ে যান রিমা। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি করার পর স্কলারশিপ নিয়ে চীনের শিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা শেষ করেন।
শৈশবে না খেয়ে পড়তে বসতে হয়েছে তাকে। প্রতিবেশীদের নেতিবাচক কথা, মায়ের আক্ষেপ—সব উপেক্ষা করে রিমা তৈরি করেছেন নিজের পথ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় টিউশনি করে স্বপ্নপূরণের খরচ জুগিয়েছেন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গেছেন সমানতালে। কিশোরীবেলায় বাজারে গিয়ে দুধ বিক্রি করতে হয়েছে তাকে—এ নিয়েও শুনতে হয়েছে নানা প্রশ্ন, তবু থেমে যাননি।
রিমা বলেন, ‘পরিবার থেকে অর্থের সহযোগিতা বা মানসিক প্রেরণা পাইনি। তবু ভেঙে পড়িনি। বই কেনার টাকা না থাকলে অন্যের কাছ থেকে ধার করে পড়েছি। আমি চেয়েছি পড়াশোনা করতেই—আর সেটি করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছি।’
সহযোগিতার জায়গায় অন্বেষা কোচিং সেন্টারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে বিনামূল্যে পড়িয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন। আমি তাদের কাছে ঋণী।’
অবশেষে তার এই অদম্য সংগ্রামের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চীনের একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘শাওশিং টেক্সটাইল কোম্পানি’তে চাকরি পেয়েছেন তিনি। খুব শিগগিরই যোগ দিতে যাচ্ছেন নতুন কর্মস্থলে। তার এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, ব্রাহ্মণপাড়ার অসংখ্য মেয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে রিমা প্রমাণ করেছেন—ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে স্বপ্ন কখনো দারিদ্র্েযর কাছে পরাজিত হয় না। বেগম রোকেয়া দিবসে তাকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। তার সাফল্যে প্রতিটি শিক্ষার্থী উদ্বুদ্ধ হোক—এটাই কামনা।
ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের এই গল্পটি তাই আজ প্রেরণা সবার কাছে—দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে এগোলে স্বপ্ন সত্যিই ধরা দেয়।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
বার্ডে এসডিজি অর্জনে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপ্...
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিআফ্রিকান-এশিয়ান রুরাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (আর্ডো) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে...
নির্বাচনকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সকলকে দায়িত...
আয়েশা আক্তারকুমিল্লা জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসান...
মনিরুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়...
বিশেষ প্রতিনিধিকুমিল্লা-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে দলের চেয়ারপার্সন বে...
বাঞ্ছারামপুরে গণ অধিকার পরিষদ নেতার টাকার বান্ডেলের ভিডিও...
ফয়সল আহমেদ খানব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার গণ অধিকার পরিষদের আহবায়ক এসকে শফিকুল ইসলাম শুভ নি...
শীত বাড়ছে, ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্রাহ্মণপাড়ার লেপ-তোষকের ক...
মোঃ আবদুল আলীম খানসকাল-সন্ধ্যা শীতের আমেজ বইছে, অগ্রহায়ণ শেষের দিকে আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন হয়েছে পুরো...
লালমাইয়ে মহাসড়কের নিচে চাপা পড়ে আছে গণকবর, স্মৃতি ফলকও নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমাইমহাসড়কের নিচে চাপা পড়েছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার জগতপুর গণকবর। স্মৃতি ফলকটি...