আয়শা আক্তার
কুমিল্লার সীমান্তবর্তী বিবিরবাজার স্থলবন্দরে সম্প্রতি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অস্বাভাবিকভাবে ঢিমেতালে চলছে। প্রতিদিনের তুলনায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
কুমিল্লা বিবিরবাজার স্থল বন্দর। দেশের ১৩তম স্থলবন্দর এটি দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল পরিমান পণ্য রপ্তানী হলেও আমদানীর তালিকা খুবই অল্প। এতে একদিকে জনগণ সুলভ মুল্য দিয়ে মালামাল ক্রয় করা থেকে বঞ্চিতের পাশাপাশি সম্ভাবনা থাকলেও সৃষ্টি হচ্ছে না কর্ম সংস্থান । বিষয়টি দিনের পর দিন এভাবে চলায় সরকারী সিদ্ধান্তহীনতায় ব্যবসায়ীরাও হতাশ। অনেক ব্যবসায়ীর দাবী যশোহরের বেনাপোল,পাশ্ববর্তী ফেনীর বিলোনিয়া স্থল বন্দরের মতো অধিক পণ্য আমদানী করা হোক।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে কাস্টমস প্রক্রিয়া জটিলতা, নথি যাচাইয়ে বিলম্ব ও সীমান্তের উভয় পাশে প্রশাসনিক সমস্যার কারণে পণ্য পরিবহনে সময় লাগছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে বন্দরে ট্রাক জট সৃষ্টি হচ্ছে এবং পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে।
কুমিল্লা বিবিরবাজার স্থল বন্দরটি সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠা পেলেও সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতের ত্রিপুরার সাথে কুমিল্লার স্বাভাবিক যোগাযোগ ছিল লোক চলাচল ও পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে। এক সময় পাসপোর্ট,ভিসা ছাড়াই যাওয়া গেলেও এখন অবৈধ পথে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের মহাসড়কের একাধিক পয়েন্ট ব্যবহার করে সরাসরি বিবিরবাজার বন্দর পৌছানো যায়। এরপর শুল্কবিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে খুব অল্প সময়েই ওপারে ভারতের শ্রীমন্তপুর পোঁছে যায়। সেখানে এদেশ থেকে রপ্তানী হওয়া মালামাল ট্রাক,কাভার্ডভ্যান,কন্টেইনার থেকে খালাস করে। একইভাবে ভারত থেকে আসা ট্রাকে করে মালামাল বিবিরবাজার স্থল বন্দরের কাছাকাছি ডাম্পিং জোন। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বন্দর সংলগ্ন ডাম্পিং জোনে আসার পর সেগুলোও আমাদের দেশীয় ট্রাক,কাভার্ডভ্যান বা কন্টেইনারে স্থানান্তর হয়। বন্দর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র বন্দরের যাবতীয় তথ্যাবলী নিশ্চিত করে। এতে জানা যায়, বিগত ২০২৪-’২৫ অর্থ বছরে এই বন্দর দিয়ে ৬১ কোটি ৬ লাখ ৪২ হাজার ২৫ টাকা মুল্যে ভারত থেকে ২ হাজার ৩’শ ২৬ মেট্রিক টন ওজনের মশুর ডাল, বেল, আদা, জিরা,আগরবাতি, পিয়াজ, কাজুবাদাম আমদানী হয়েছিল। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ২’শ ৭১ কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার ৭’শ ৯৮ টাকা মুল্যের ৯৫ হাজার তিনশ একুশ দশমিক ৯৭৫ মেট্রিক টন ওজনের সিমেন্ট, এলপিজি,গুড়া পাথর, পিভিসি পাইপ, প্লাষ্টিক দরজা, ফ্রেম, পিভিসি কম্পাউন্ড, কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস, লীচু ড্রিংক,টাইগার ,স্পীড ড্রিংক, সিমেন্ট সীট, ইট ভাংগা মেশিন,ধন মাড়াই কল,রিফ্ল্রেকটিভ গ্লাস,ময়দা ইত্যাদি পন্য রপ্তানী হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৭’শ ৯৫ জন ভারতে যায় এবং ভারত থেকে ২১ হাজার ৪’শ ৩১ জন বাংলাদেশে আসে।
স্থানীয় শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, কাজের চাপ কমে যাওয়ায় তাদের দৈনিক আয়ও কমে গেছে। এক শ্রমিক বলেন, “আগে দিনে দুই-তিনটা ট্রাক খালাস দিতাম, এখন অনেক সময় একটাও আসে না।”
বন্দরে কথা হয় সিলেট থেকে আসা ব্যবসায়ী জামাল এবং ভারতের সোনামুড়া এলাকার আশিষ নামের অন্য এক ব্যবসায়ীর সাথে। তারা বলেন, মোটামুটি বাংলাদেশ থেকে অনেক প্রকারের পণ্য ভারতে রপ্তানী হচ্ছে। সে তুলনায় ভারত থেকে সামান্য কিছু মৌসুমী ফল ও মসলা । অথচ কয়েক বছর আগেও এই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমান গম আমদানী হয়েছে। তারা আরও বলেন, গম,চাল,আলু,সব্জি,তরিতরকারী,কাচা মরিচ,টমেটো,গাজরছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড়,চিনি, কাগজ ইত্যাদি পণ্য আমদানী করা হলে অনেকটা সহজেই কুমিল্লা ও এর আশপাশের জেলাগুৃলোর লোকজন এর সুফল পেতো। বাংলাদেশ থেকে এতসব পণ্য যাচ্ছে ভারতে অথচ সে তুলনায় ভারত থেকে নামমাত্র বেল,আগরবাতি,জিরা,পিয়াজ ইত্যাদি আমদানী হচ্ছে , আমদানীর তালিকাকি আরো বড় করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে বিবিরবাজার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তারা আশাবাদী, শিগগিরই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
তার পরের বিষয়টি এনবিআর এর সিদ্ধান্ত।