
প্রতিবেদক: Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 3 Aug 2025, 11:45 AM

চরের মাটি বিক্রি করে কোটিপতি আ’লীগ নেতা জহির, রক্ষা পায়নি ধর্মীয় স্থাপনাও!

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোমতি নদীর চর দখল করে কোটি কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর দূর্গাপুর ইউনিয়নের আড়াইওড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে ‘মাটি খেকো জহির’। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী এই ব্যক্তি বিগত ১৭ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা, জমি দখল, ধর্মীয় স্থাপনায় হস্তক্ষেপসহ একের পর এক অনৈতিক কাজ—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এক সময়ের চালের দোকানের কর্মচারী জহিরুল ইসলামের বাবা ছিলেন একজন ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী। অভাব-অনটনের মধ্যেই কাটছিল তাদের জীবন। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভাগ্য বদলে যায় জহিরের। শুরু হয় তার প্রভাবশালী হয়ে ওঠার গল্প। দলীয় পরিচয় ও ক্ষমতার বলয়ে মাদক ব্যবসা, অন্যের জমি দখল ও গোমতি নদীর চর কেটে মাটি বিক্রি করে তিনি হয়ে উঠেন কোটি টাকার মালিক।
সম্প্রতি জহিরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগটি এসেছে ধর্মীয় স্থানের জমি দখল ও মাটি কাটার বিষয়ে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওড়া শাহগঞ্জ এলাকায় সুফি সাধক সৈয়দ শের আলী শাহ (রঃ)-এর সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় সম্পত্তির জমি দখল করে প্রায় ১০ লাখ ঘনফুট মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেন পীরের বংশধর সৈয়দ আসিফ শাহ।
আসিফ শাহ কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১০ জুলাই বিকালে জহির মিয়া ৫/৬ জন সহযোগী নিয়ে ভেকু মেশিনসহ ধর্মীয় জমিতে ঢুকে মাটি কাটতে শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে আসিফ ও তার পিতাকে মারধর করা হয়। এমনকি ছেনি দিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তার অভিযোগ অনুযায়ী, দখলকৃত ১৭২ শতক জমি থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার সমমূল্যের মাটি তুলে বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয়রা এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেও জহিরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, পূর্বেও প্রতিবাদকারীদের ওপর নেমে এসেছে হামলা ও হয়রানির অভিযোগ।
এ বিষয়ে পীর সৈয়দ আকছির শাহ বলেন, “আমার জমিতে চারা গাছ রাখার অনুমতি চেয়েছিল জহির। আমি মানবিক কারণে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি, সে সেই জমি থেকে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট মাটি কেটে নিয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।” তিনি জানান, বিষয়টি শুনে দরবার শরীফের ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পীর সাহেব নিজেই তাদের শান্ত করেন এবং আইনি পথ বেছে নেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহিনুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতেও একাধিক অভিযোগ করা হলেও জহিরের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক সময় আত্মগোপনে চলে যান জহির। তবে সম্প্রতি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ‘মাসিক মাসোহারার’ চুক্তিতে পুনরায় সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জহিরুল ইসলাম দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। পীর সাহেবের অনুমতি নিয়েই তাদের মাটি বিক্রি করেছি। মাটির কিছু টাকাও দিয়েছি। এখন তারা অস্বীকার করছে।” তবে স্থানীয়দের মতে, মাটি খননের জন্য কোনো লিখিত অনুমতি বা বৈধ দলিল দেখাতে পারেননি জহির। তার কথায় বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর

চৌদ্দগ্রামে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষ...
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধিকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ‘বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’ এর...

মানবিক কুমিল্লার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা পেল স...
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকুমিল্লা নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠি...

মহাসড়কে চান্দিনায় বিএনপি’র রিক্সা মিছিল
চান্দিনা প্রতিনিধিকুমিল্লায় চান্দিনায় ‘আগামী ৫ আগস্ট চান্দিনা উপজেলা বিএনপি’র বিজয় মিছিল ও সমাবেশ’ স...

পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে দুই দিন ব্যাপি ইন-হাউজ প্রশিক্ষণের সম...
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিবিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকমন্ডলীর পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে শতবর্ষী বাগমারা উচ্চ বি...

নাঙ্গলকোটে একসাথে চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ
সাইফুল ইসলামকুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি সেতুর নির...

৯জনের জন্য ৪শ’ বছর আগে নির্মিত যে মসজিদ
মাহফুজ নান্টুদিঘিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। প্রায় চারশ’ বছর আগে মুঘল স্থাপত্যের আদলে নির্মিত হয় মসজি...
