
প্রতিবেদক: Alak Hossain | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 22 Aug 2025, 10:16 PM

জার্নি টু এডামস পিক
গোলাম কিবরিয়া খোন্দকার
২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মালদ্বীপ থেকে শ্রীলংকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট যোগে যখন কলম্বোর বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি তখন নিশুতি রাত। বিমান থেকে নেমে অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য নির্ধারিত ইমিগ্রেশন কিউতে দাঁড়াই। ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্ট নেড়ে চেড়ে ভিসা না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। বাংলাদেশের অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারগণ শ্রীলঙ্কায় ঠরংধ ঊীবসঢ়ঃরড়হ পেয়ে থাকেন- এ বিষয়টি জানালে ভদ্রলোক কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে কী যেন চিন্তা করলেন। আমিও নিষ্পলক তাঁর ভ্রু কতটুকু কুঁচকায় সে দিকে শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে পরিস্থিতির গভীরতা বুঝার চেষ্টা করলাম। কেননা তাঁর ভ্রু কুঁচকানোর মাত্রার ওপর নির্ভর করছে আমার ভিসা পাওয়া না পাওয়ার সম্ভাবনা। ভদ্রলোক পাসপোর্ট আরেক দফা নেড়েচেড়ে আমার হাতে ফেরত দিয়ে চিফ ইমিগ্রেশন অফিসারের কক্ষে যোগাযোগ করার অনুরোধ করলেন। টেনশনে এবার আমার শরীরে চিকন ঘামের উদ্রেক শুরু। দোয়া দরুদের মাত্রা বাড়িয়ে চিফ ইমিগ্রেশন অফিসারের কক্ষে উঁকি দিলাম। সিংহলী ভদ্রলোক শান্তভাবে আমাকে বসতে বলে আমার থেকে আরেক দফা ইন্টারভিউ নিলেন, নিজেই কম্পিউটারে পাসপোর্ট স্ক্যান করে কী কী তথ্য যেন এন্ট্রি করলেন, তারপর আমাকে আবার ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যেতে বললেন। পাসপোর্ট নিয়ে এবার কাউন্টারে গেলে সেই ইমিগ্রেশন অফিসার গটাগট সিল দিয়ে শুভ কামনা জানালেন। ঘাম দিয়ে আমার জ্বর ছাড়ল। শ্রীলঙ্কা আসার আগে আমি জানতাম ভিসার জন্য ২০ ডলার দিতে হয়, কিন্তু কোন ফি চাড়াই আমি প্রবেশের অনুমতি পেলাম। জামাল এ নাসের স্যার দেশ থেকেই ই-ভিসা নিয়ে আসায় দেরি হয়নি। কিন্তু সবুজ পাসপোর্ট হওয়ায় আলমগীর ভাইকে ভিসা ফি জমা দিয়ে ভিসা নিতে হলো। এক একজনের ইমিগ্রেশন এক একরকম হওয়ায় সবাই বেরিয়ে আসতে সময়ও লাগলো বেশ। রাত তখন ১ টা পার হয়ে গেছে।
হাসানের গাড়িতে শ্রীপাদা’র উদ্দেশ্যে যাত্রা
ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে যৌথ ফান্ড থেকে ১০০ ডলার ভাঙালে ১৭৯.৫০ রূপি দরে ১৭৯৫০ শ্রীলংকান রুপি পেলাম। এক্সচেঞ্জ রেট হিসাব করে দেখলাম আমাদের ১ টাকা= শ্রীলঙ্কান ২টাকা। আমরা আগেই ইড়ড়শরহম.পড়স এর মাধ্যমে কলম্বোতে হোটেল বুকিং দিয়ে এসেছি। বিমানবন্দর থেকে কলম্বোর দুরত্ব ৩৫ কিমি। বিমানবন্দরের টেক্সি কাউন্টার থেকে ২৮০০ রুপিতে কলম্বো ঘবি ঈযবঃঃু ঝঃৎববঃ এ আমাদের হোটেলে যাওয়ার জন্য টেক্সি নিলাম। রাত তখন ১.৩০ টা। আমাদের গাড়ি চলা শুরু করলো। আমি সাধারণত নতুন দেশে ভ্রমণে গেলে ড্রাইভার থেকে সে দেশ সম্পর্কে তথ্য নিই। তাই গাড়ি চলা শুরু করতেই শুরু করি আমার মিশন-কথোপকথন; নাম কী, বাড়ি কই, গাড়ি নিজের নাকি ভাড়া, দিনে কতক্ষণ গাড়ি চালান, দেশের সার্বিক অবস্থা কী, পর্যটকদের নিরাপত্তা কেমন, গাড়ি-হোটেল-খাবারের দাম কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। গাড়ির ড্রাইভার হাসানের বাড়ি ক্যান্ডিতে। সেই জানালো এডামস পিক গেলে এখনই উপযুক্ত সময়। কলম্বো না গিয়ে সোজা এডামস পিকে গেলে সকাল সকাল পৌঁছানো যাবে। যেই কথা সেই কাজ। চারজনের একমত হতে সময় লাগলো না। হাসান মিয়ার সাথে ১৫৫০০ রুপিতে দরাদরি করে গাড়ি ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ এডামস পিক রওয়ানা হয়ে যাই। এবার চারদিকে চোখ বুলাই। সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে লঙ্কায় এসেছি। যা দেখি তাই নতুন লাগে। রা¯ার দুইপাশ আমাদের দেশের মতোই মনে হলো। আমাদের দেশের ‘ড্রাইভার হোটেলের’ মতো কয়েকটি রেস্টুরেন্ট দেখলাম। গাড়ি থামিয়ে অনেকে খাচ্ছেন। আমরাও একটিতে দাঁড়িয়ে পরোটা-সবজি-ডিম খেয়ে নিলাম। সকাল ৭ টায় ‘শ্রীপাদা’ জেলাধীন এডামস পিক এলাকায় নাল্লথানিয়া নামক গ্রামে পৌঁছি। এই নাল্লাথানিয়া থেকেই জাবালে আদম এ উঠার সিড়ি শুরু। দুর থেকে এডামস পিক দেখলাম। পাহাড়ের ওপর বিশাল একটি পাথর। ঐ এলাকার সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়াটিই এডামস পিক। পাহাড় চূড়ার নিচের এলাকাটা আমাদের দেশের বিভিন্ন মাজার ও মন্দির এলাকার মতোই- ফুল, মিষ্টি, বৌদ্ধ মূর্তি ও বাচ্চাদের খেলনার দোকানে ঠাসা।
জার্নি টু এডামস পিক ঃ
আমাদের সর্ববয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য জামাল নাসের স্যারকে বিদায় জানিয়ে নাস্তা না করেই আমরা পা বাড়াই এডামস পিক এর উদ্দেশ্যে। হার্টে রিং পরানো থাকায় স্যার উঠবেন না। একের পর এক সিড়ি মাড়ানো শুরু করলাম, আর ডানে বামে চোখ বুলাতে লাগলাম। পুরো রাস্তা জুড়েই মাইকে বৌদ্ধধর্মের ¯ুতিগাঁথা ভক্তিমূলক বিভিন্ন সঙ্গীত বাঁজছে। দোকানদারেরা তাদের দোকানের ঝাঁপ তুলছে। পথের বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত বৌদ্ধমূর্তি। দলে দলে বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা এডামস পিক থেকে নেমে আসছিল। এই সাতসকালে উঠছে কম কিন্তু নামছে বেশ। যারা নামছে তাঁদের অধিকাংশ গত সন্ধ্যায় আবার কেউ রাত ২-৪ টার দিকে রওনা হয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে, যেখানে আছে পৃথিবীর প্রথম মানব আদি পিতা হযরত আদম আ. এর পবিত্র পদচিহ্ন। জানতে পারলাম, সন্ধ্যার পর অধিকাংশ পর্যটক/দর্শনার্থী পর্বতে আরোহন করে। উঠার যাত্রীদের মধ্যে শুধু আমরাই। ইউরোপীয় পর্যটকের সংখ্যা অনেক। অনেকের সাথে চোখাচোখি হলেই আমাদের জন্য শুভকামনা সূচক একটি মিষ্টি হাসি দেয়। ৭কিমি বি¯ৃত প্রায় ৫৫০০ সিড়ি আরোহন কি সহজে শেষ হয়? আল্লাহর নাম নিয়ে আমাদের তিন জনের যাত্রা চলতেই থাকে। সুযোগ পেলেই বসে পড়ি, একটু বিশ্রাম নিই। একজন শ্রীলঙ্কান তীর্থযাত্রীকে দেখলাম পায়ে রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ নিয়ে আরোহন করছেন। ব্যান্ডেজের কিয়দংশ খুলে গেছে। হয়তো রোগ আরোগ্যের জন্য মান্নতের অংশ হিসেবে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত পা নিয়ে এ পবিত্র পাহাড়ে আরোহন করছেন। ছোট কয়েকটা বাচ্চাকে দেখলাম, মায়ের সাথে হাসতে-খেলতে দৌড়ে দৌড়ে ওঠে যাচ্ছে। ২০/২১ বছরের কয়েকজন জওয়ানকে দেখলাম ধীর পায়ে সিমেন্ট ভর্তি ব¯া মাথায় নিয়ে সোজা ওঠে যাচ্ছে। তাদেরকে দেখে নিরাপত্তা বাহিনীর রিক্রুট মনে হলো, যারা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এ কাজ করছে। হেঁটে যাচ্চি- ১ঘন্টা/ ২ঘন্টা /৩ঘন্টা! পথতো আর পুরোয় না। ফিরে আসা যাত্রীদের সংখ্যাও একসময় কমে আসে। যত উপরে যাই সিড়ি তত খাঁড়া হতে থাকে। নিচে তাকাতে আর সাহস হয়না। উপরেও তাকানো বাদ দিয়ে রেলিং ধরে ধরে শুধু সিড়ির দিকে নজর রেখে উপরে উঠতে থাকি। সংকল্প রাখি উঠবোই ইনশাআল্লাহ। এবারের ট্যুরের মূল উদ্দেশ্যই হলো বাবা আদমের স্মৃতি বিজড়িত জাবালে আদম বা এডামস পিক আরোহন। ভ্রমণ টিমে আমি জুনিয়র হলেও বার বার পিছিয়ে পড়ি। সিরাজ স্যার ও আলমগীর ভাই উপরে উঠে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমি তাঁদের কাছে পৌছলে আবার চলা শুরু করে।
শ্রীলঙ্কান চা ঃ
যত উপরে উঠি আস্তে আস্তে দোকানপাটের সংখ্যা কমে আসে। উচ্চতার সাথে পাল্লা দিয়ে জিনিসপত্রের দামও বৃদ্ধি পায়। পানি, কোক, চা ও কলা সব কিছু। নিচ থেকে এখানে পানি/কোকের দাম ৩গুন। যত উপরে দাম তত বেশি। তিন ঘন্টা চড়ার পর শরীর-পা কোনোটাই আর চলছিল না। একটি দোকানে ধপাস করে বসে পড়লাম। গা কাঁপছিল। উচ্চতার কারণে নিশ্বাস নিয়ে আরাম পাচ্ছিলাম না। আমার অবস্থা বুঝে বাকি দুই সহযাত্রী যাত্রা বিরতি দিলেন। সিরাজ স্যার এক মগ দুধ চা এনে পরম মমতায় হাতে তুলে দিলেন। আহ! শান্তি! ৬০০০ ফুট উচ্চতায় আমার প্রিয় দুধ চা! পৃথিবীতে চা যে এত মজা আর তৃপ্তির হতে পারে সেদিন বুঝেছিলাম। বিশ্ববিখ্যাত শ্রীলঙ্কান চা খেয়ে একটু শক্তি হলো। মজার বিষয় হলো, এত উচ্চতায়ও প্রকৃতির ডাক আসে! কী আর করা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে শৌচাগারেও গেলাম। এবার একটু সতেজ বোধ করলাম। শরীরে শক্তি কম হলেও মনে সংকল্প অটুট। যেতেই হবে ঐ পাহাড় চূড়ায়! আমার পূর্ব পুরুষের পদচিহ্ন আমাকে দেখতেই হবে। আল্লাহ তুমি সাহায্য কর। উপরে তাকিয়ে দেখি একদম খাড়া এডামস পিক, ঠিক মাথার উপর। ৭০ হতে ৮০ ডিগ্রি খাঁড়া। দূরে একঝলক নজর দিলাম। আমরা অনেক উপরে। চারিদিকে সব অনুচ্চ পাহাড়, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, মানুষজন সব নিচে, অনেক নিচে খুব ছোট ছোট। ভয়ে আড়ষ্ট হওয়ার উপক্রম। না, ভয়কে মনে স্থান না দিয়ে আল্লাহর নামে আবার যাত্রা শুরু করলাম। কোনোদিকে না তাকিয়ে লোহার রেলিং ধরে ধরে আরোহন শুরু করলাম। পাক্কা চার ঘন্টা হাঁটার পর ৫৫০০ সিঁড়ি বেয়ে ৭৩৫৯ ফুট উচ্চতায় আমরা এডামস পিক এ পৌঁছে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এডামস পিক
বলে রাখি, কুদরতি কারণে মহান আল্লাহর আদেশে বেহেশত থেকে হযরত আদম আ. এই পাহাড়ের চূড়ায় অবতরণ করেন। এ পবিত্র পাহাড়ের উপরে একটি বিশাল সাইজ পাথরে তাঁর পবিত্র পদচিহ্ন খোদিত আছে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা জুতা খুলে সে পবিত্র পাহাড়ের শীর্ষদেশে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ মুখে ড্রাম ভর্তি পানি রাখা আছে। আমরা তিনজন পরিযায়ী সে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুইলাম, ওযু করলাম। শরীরটা জুড়িয়ে গেল। ক্লান্তির লেশমাত্র রইলো না।
থাকবে কেন? দীর্ঘ পরিশ্রমের পর প্রতিফল যে আমাদের হাতের নাগালে! আমরা ওযু করে উপরে আরোহন করলাম। নিচ থেকে পাহাড়ের চূড়াটিকে একটি পাথরের বড় খন্ডই মনে হয়েছে। কিন্তু উপরে বেশ জায়গা। চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। পাহাড় চূড়ায় প্রায় ৪০ বাই ৪০ ফুটের একটি সমতল জায়গা। মাঝ বরাবর ১৫/১৬ ফুট উঁচু একটি শৃঙ্গ, সেখানে স্টিল নির্মিত একটি ঘরে বাবা আদম আ. এর ফুট প্রিন্ট বা পদচিহ্ন রক্ষিত আছে। বলে রাখি, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই পদচিহ্নকে বুদ্ধের পদচিহ্ন মনে করে। বর্তমানে তাদের দখলেই আছে পুরো এলাকাটি। আমরা প্রায় ৪০/৫০ জন বিভিন্ন দেশের পর্যটক। আমাদেরকে বসতে বলা হলো, কারণ এখন তাদের বিশেষ প্রার্থনা হবে। সারিবদ্ধভাবে আমরা বসে গেলাম। বৌদ্ধদের বিশেষ প্রার্থনা শুরু হলো। সাদা ধূতি, সাদা ফতুয়া ও পাগড়ি (টুপির মতো বাঁধা) পরিহিত আট দশজন পূণ্যার্থী বিভিন্ন জিনিস পত্র: যেমন- ধূপ, ঘর, মঙ্গল দ্বীপ, ও নারিকেলের ফুল নিয়ে পদচিহ্ন সম্বলিত চূড়াটির চার পাশে ধীরলয়ে পদক্ষিণ করলেন। সামনের জন একটি বাঁশি বাজাচ্ছিল। প্রদক্ষিন শেষ হলে তারা দীর্ঘ সময়ধরে প্রার্থনা করলেন। প্রার্থনা শেষে উপস্থিত সবাইকে পিক এ উঠার সুযোগ করে দিলেন। আমরা সারিবদ্ধভাবে আস্তে আস্তে উপরে উঠলাম। অনেক শ্রীলংকানকে পদচিহ্নের সামনে সিজদা দিতে দেখলাম। পদচিহ্নটিকে কমলা রঙের রেশমি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। উপরে একপাশের দেয়ালে পদচিহ্নের প্রমাণ সাইজের একটি রেপ্লিকা (স্বর্ণ বা ব্রোঞ্জ নির্মিত) রাখা আছে। পদচিহ্নের সেখানে দাঁড়ানো যায় না, ছবি উঠানোও নিষেধ। নিয়ম কানুনের যাতে কোন ব্যাত্যয় না ঘটে সেজন্য পুলিশ দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। এতদ্বসত্ত্বেও গোপন ক্যামেরায় আমি পুরো এলাকাটির ভিডিও করে এনেছি। যা আপনারা আমার টাইম লাইনে দেখতে পাবেন। পবিত্র পদচিহ্নের পাশেই রেপ্লিকার সমউচ্চতার একটি বৌদ্ধমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। অনেক নারী-পুরুষকে সেখানে সিজদা করে টাকা দিতে দেখলাম। ঘুরে ঘুরে পুরো এডামস পিক এর ভিডিও করলাম। একটু নিচের দিকে একজায়গায় শত শত প্রদীপ জ্বলতে দেখা গেলো। এবার চারদিকে দৃষ্টি দিলাম। আমাদের থেকে অনেক নিচে বিভিন্ন পাহাড় চূড়া ও আনাচে কানাচে মেঘ দেখতে পেলাম। ইচ্ছে ছিল দুই রাকাত নামাজ পড়ব, কিন্তু সুযোগ পেলাম না। কারণ, বৌদ্ধদের দখলে পুরো এলাকা। তারা মনে করে, এটা গৌতম বুদ্ধের পদচিহ্ন!
এডামস পিক থেকে ফেরত যাত্রা ঃ
ঘন্টা খানেক বাবা আদমের পদচিহ্নের সান্নিধ্যে অবস্থান করে ফেরার প্র¯ুতি নিলাম। শরীরটা এখন বেশ ফুরফুরে। এবার ফেরার পালা। আল্লাহর নামে আবার যাত্রা শুরু করলাম। পথিমধ্যে আমাদের সফর সঙ্গী আলমগীর ভাই সিঁড়িতে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। উপরে কিন্তু নামাজ পড়ার কোন ব্যব¯'া ছিলনা। আলমগীর ভাই টুপি মাথায় থাকলেও বৌদ্ধদের শর্তমোতাবেক পর্বত চূড়ায় টুপি খুলে ফেলতে হয়। নামাজ শেষে আবার যাত্রা। উঠার থেকে নামা আরো কঠিন। হাটুর জয়েন্ট ঢিলে হয়ে ভর নিতে অক্ষমতা প্রকাশ করছিলো বারবার। মনে হয় যেন, পড়ে যাবো। তাই পর্বত চূড়াকে পিছ দিয়ে নামা শুরু করলাম। এতে হাঁটুর সমস্যা থেকে মুক্তি পেলাম। নামার গতিও বেড়েছে। আধাআধি আসার পর দেখা হলো ঢাকা কলেজে কর্মরত ২৭ বন্ধু জিয়াউল কবির ও শুকলাল বিশ্বাস স্যারের সাথে। আমাদেরকে পেয়ে তাঁরা আর তাঁদেরকে পেয়ে আমরা আনন্দে আত্মহারা। স্মৃতিস্বরূপ সেলফিতে কয়েকটি ছবি তুলি। মালদ্বীপ থেকে আমরা পরস্পর পরস্পরকে খুঁজতেছি, শেষ পর্যন্ত এডামস পিক এ দেখা। উনাদেরকে শুভ কামনা জানিয়ে আমরা আবার নামা শুরু করি। মোটামুটি পর্বতের পাদদেশে এলে বৃষ্টিতে আক্রাš হই। আমাদের গতি স্থিমিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বিকাল ৩.৩০ টায় আমরা নেমে আসি। আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ৮ ঘন্টার হাইকিং-এ শরীরের প্রতিটা পেশী ও গিরায় ব্যাথা করছিল। শরীরে কতরকম পেশী আছে তা জানতে পারলাম এডামস পিকের এই চড়াই উৎরাইয়ে। জামাল নাছের স্যার আমাদেরকে রিসিভ করতে পর্বতের গোঁড়ায় এসে বসে ছিলেন। গত রাতে আমাদের ঘুম নাই, এমনকি সেভাবে ডিনারও হয়নি, সকালে নাস্তা নেই আবার দুপুরে লাঞ্চ ও নেই। ক্ষুধায় তখন পেটে ইঁদুর-বাদুড় দৌঁড় চলছে। বিকেল চারটায় পর্বতের পাদদেশে একটি হোটেলে ঢুকে গোগ্রাসে কিছু গিললাম। তারপর জামাল নাছের স্যারের হোটেল রূমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আবার মুসাফিরিয়ানা- জার্নি টু কলম্বো শুরু। রাত এগারোটা পর্যš...
এডামস পিক- কী, কেন, কীভাবে
সমুদ্র সমতল থেকে ২২৪৩ মিটার বা ৭৩৫৯ ফুট উঁচু একটি পর্বত। পর্বত শীর্ষে (এডামস পিক) আট ফুট উঁচু ১.৮ মিটার বা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির একটি পাথরে বাবা আদম আ. এর পবিত্র পদচিহ্ন আছে। পায়ের চাপটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি আর প্রস্থ ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। মুসলমান ও খ্রিস্টানরা এটিকে বাবা আদমের পদচিহ্ন বলে মনে করে। কিন্তু বৌদ্ধরা এটিকে বুদ্ধের পদচিহ্ন মনে করে। ঐ এলাকায় এই পদচিহ্নকে ঝৎর চধফধ অর্থাৎ ঝধপৎবফ ঋড়ড়ঃঢ়ৎরহঃ বা পবিত্র পদচিহ্ন বলে অভিহিত করা হয়। শ্রীলংকায় যে জেলায় এ পাহাড়টি অবস্থিত, সে জেলার নাম ঝৎর চধফধ. কিংবদন্তি পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৪ সালে এডামস পিক এ আরোহন করেন। তারও আগে ইটালিয়ান পর্যটক মার্কো পোলো ১২৯৮ সালে এডামস পিক এ আরোহন করেন। ইবনে বতুতা এই পাহাড়কে ঝধৎধহফরন বাংলায় ‘চরন দ্বীপ’ বলে তাঁর বইতে আখ্যায়িত করেন। পূণ্যার্থীদের উঠার সুবিধার্থে তখনও একটি সিড়ি ও লোহার চেইন থাকার কথা ইবনে বতুতা তাঁর বইতে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য: এবারের ভ্রমণ টীমে ছিলেন-
১। জনাব জামাল এ নাসের, ছদ্মনাম জরাঁ অহরশবঃ. অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
২। প্রফেসর মো. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যক্ষ, গৌরীপুর মুন্সী ফজলুর রহমান সরকারি কলেজ, কুমিল্লা।
৩। জনাব আসাদুর রশিদ আলমগীর, অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়, কুমিল্লা
৪। আমি- গোলাম কিবরিয়া খোন্দকার, সহকারী অধ্যাপক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
বার্ডে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপিত
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিগত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫’...

কুমিল্লায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম ওলামাদের ভূমিকা নিয়ে...
অশোক বড়–য়া২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ কুমিল্লা জেলা মডেল মসজিদ ও ই...

দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে হুমকির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান মো...

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ মাছুম মিয়ার কবর জিয়ারত করলেন অজিত...
নিজস্ব প্রতিবেদকজুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকায় শহিদ ম...

বুড়িচংয়ে মসজিদে নামাজরত যুবককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ২ জন গ্রেপ...
নিজস্ব প্রতিবেদককুমিল্লার বুড়িচংয়ে মসজিদের ভেতরে নামাজরত অবস্থায় মোবাইল ব্যবসায়ী সায়মন রেজাকে ছুরি...

স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চ...
জাহিদ পাটোয়ারীবিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশ পুনর্গঠনে প্...