
প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 2 Oct 2025, 10:56 AM

নারকেলগাছ ছেঁটেই চলছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রমেশের জীবন সংসার

জাহিদ পাটোয়ারী
রমেশ চন্দ্র মজুমদার। বয়স ৬৫ বছর। দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। কানেও শোনেন কম। তিনি পেশায় একজন গাছি। বর্তমানে তাঁর শরীরে নানা রোগে বাসা বেঁধেছে। স্বাভাকি ভাবে হাটা-চলা করতেও কষ্ট হয়। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হওয়ায় এখনো কর্ম ছাড়েননি। পরিবারের আহার জোগাড় করতে লাঠিভর দিয়েই প্রতিদিন সকালেই বেড়িয়ে পড়েন কাজের উদ্দেশ্যে। নিজ গ্রামসহ পাশ্বর্তী বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গাছির (গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার) কাজ করেন তিনি। চোখের দৃষ্টি না থাকলেও তাঁর হাতের দৃষ্টি অসাধারণ। কাজের সুনাম রয়েছে বেশ। তবে দৃষ্টি শক্তি ছাড়া পেশাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি যে কোন সময় বড় ধরণে দুর্ঘটনায় শিকায় হতে পারেন। সচেতদের অভিমত, চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি ফিরে পেতেপারেন চোখের দৃষ্টি। তাই সমাজের ভিত্তবানদের প্রতি তারা সহযোগীর আহবান জানিয়েন।
রমেশ চন্দ্র মজুমদারের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মালিগাঁও ইউনিয়নের চাপাতলী গ্রামের বাসিন্দা মৃত প্রসন্ন মজুমদারের ছেলে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, চাপাতলী, লক্ষীপুর, পুটিয়া, বাসরা ও মালিগাঁও সহ পাশের বিভিন্ন গ্রামে মানুষের তাল ও নারিকেল গাছ পরিষ্কারের কাজ করেন রমেশ মজুমদার। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। এই কাজে তাঁর বেশ সুনাম রয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় বর্তমানে দৃষ্টি শক্তি না থাকলেও তিনি সেই সুনাম ধরে রেখেছেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে রাখেন একটি ছেনি, গাছের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করার জন্য একটি লাঠি ও ১০ থেকে ১২ ফুটের একটি রশি। কেউ একজন তাকে গাছ ধরিয়ে দিলেই তিনি গাছে উঠেন নির্ভয়ে। নিজের সুবিধামতো গাছে লঠি বেঁধে ধারালো ছেনি দিয়ে ডালসহ সম্পন্ন গাছ নিখুঁদ ভাবে পরিষ্কার শেষে নিচে নেমে আসেন। প্রতিটি গাছ পরিষ্কারের জন্য তিনি পারিশ্রমিক নেন মাত্র ১২০ টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, লক্ষীপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের বাড়িতে একটি শর্টপেন্ট পরে খালি গায়ে হাজির হন রমেশ মজুমদার। তাঁকে জালাল উদ্দিন একটি নারকেল গাছ ধরিয়ে দেন। টিনের চালা ঘেসা গাছটি, চোখে দেখেন না। গায়ে লাগলে কেটে যেতে পারে। তাই বাড়ির লোকজন চিৎকার করে উঠেন রমেশ যেন সাবধান হন। তিনি উত্তর দিলেন সাবধানে উঠছি। ৩০ মিনিট সময় নিয়ে সুন্দর করে গাছটি পরিষ্কার করলেন। ফুল ও ফল রয়েছে যতেœ। দেখে যে কারো মনে হবে গাছটি কোন দক্ষ লোক চোখে দেখে পরিষ্কার করেছেন। ওই বাড়িতে এক ঘন্টায় তিনি ৩টি নারকেল গাছ পরিষ্কার করেছেন।
খুব যত্ম করে কাজ করেন। হাত দিয়ে অনুভব করেন কোথায় কাটতে হবে। হাতই হয়ে উঠে তার জীবন ধারণের চোখ! তিনি ৪৫বছর ধরে গাছ কাটেন। গত ১৫ বছর ধরে তার চোখের আলো হারিয়েছেন। এক ছেলে দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি ছেলে বিদেশে গিয়ে কাজ পাননি, বেকায়দায় আছেন। বাড়িতে টাকা পাঠানোতো দূরের কথা নিজেই খেতে পারছেন না। তাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে তিনি কাজে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, তিনি ভিক্ষাবৃত্তি পছন্দ করেন না, তাই কাজ করেন। কেউ বিশ^াস কেউ তাকে ঠকায় না। প্রতিটি নারিকেল গাছ পরিষ্কারে নেন ১২০ টাকা। ছোট একটি দুর্ঘনায় এখন তাল গাছ কাটা ছেড়ে দিয়েছেন। কাজ পেলে দিনে ৪০০ থেকে ৮০০টাকা পর্যন্ত আয় করেন। কোন দিন গ্রাম ঘুরে কাজও পাননা। তবে প্রতিদিন বের হন না, শরীর ভালো লাগে তখন বের হন।
তিনি আরও বলেন, ১৫ বছর আগে দুই চোখ বিনা পয়সায় অপারেশন করিয়েছি। এরপর আর চোখে দেখিনা। টাকা অভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করাতে পারিনি। টাকা থাকলে আজ এই অবস্থা হতো না। পূনরায় অপারেশনের মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরে পাবেন বলে তার বিশ^াস। তাই তিনি দৃষ্টি ফিরে পেতে সমাজের ভিত্তবানদের সহযোগীতা চেয়েছেন।
রমেশের স্ত্রী তুলসী মজুমদার বলেন, তিনি কাজে গেলে দুশ্চিন্তায় থাকি। কিভাবে ফিরবেন? কখন ফিরবেন? পরিবারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি অসুস্থ্য শরীর নিয়েও কাজে যান। কোন দিন পায় আবার কোন কাজও পায়না। চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে তাঁর কষ্ট কমতো।
স্থানীয় শিক্ষক মতিন সৈকত বলেন, রমেশ মজুমদার একজন কাজ পাগল মানুষ। দৃষ্টি শক্তি না থাকলেও তাঁর মানসিক শক্তি প্রভল। তিনি গাছ কাটা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হলেও তার কাজে শৈল্পিকতা রয়েছে। মানবিক বিষয় বিবেচনায় এলাকার মানুষ তাকে দিয়ে কাজ করান। তার চিকিৎসায় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মতিন সৈকত মনেকরেন।
বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেনের নির্বাহী পরিচালক ও লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা এস এম মিজান বলেন, রমেশ দাদা জীবনের কঠিন বাস্তবতায়ও ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চিকিসা করে তিনি আবারও দৃষ্টি শক্তি ফিরেপাবেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা কথা কলেছি লাখ খানেক (এক লাখ) টাকা লাগতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে সরাসরি রমেশ মজুমদাকে সহযোগীতা করার আহবান জানান তিনি।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাছরীন আক্তার বলেন, রমেশ চন্দ্র মজুমদারের বিষয়টি আমার জানা নেয়ে। আপনার মাধ্যমে শুনেছি। স্থানীয় ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর নিয়ে তাঁকে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশ দলের
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দারুণ সূচনা করল বাংলাদেশ। কলম্বোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেট আর...

ব্রাহ্মণপাড়ায় নতুন ওসি হিসাবে যোগ দিলেন সাজেদুল ইসলাম
মো. আনোয়ারুল ইসলাম।।কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেছেন মো....

চান্দিনায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
সোহেল রানাচান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধিকুমিল্লার চান্দিনায় পানিতে ডুবে মো. রাফি নামের আড়াই বছরের এক...

কুমিল্লার আসিফ আকবর বিসিবি’র পরিচালক হলেন
আসিফ তরুণকয়েকদিনের নাটকীয়তা ও নানা গুঞ্জন শেষে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেন ১৬ জন। বিসিবি নির্বাচ...

দেবিদ্বারে অস্ত্র ও মালামালসহ আন্তঃজেলার ১৪ ডাকাত গ্রেফতার
মো আক্তার হোসেনলংমিল্লায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দারসহ ১৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের...

সদর দক্ষিণে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে হাজী ইয়াছিন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণবিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছি...
