প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 5 Dec 2025, 9:36 PM
বিবিরবাজারে ভাগারজুড়ে জমে থাকে ময়লার স্তূপ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী
আয়েশা আক্তার
কুমিল্লায় আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার স্থলবন্দরের পাশে একটি বিশাল ও পুরোনো ময়লার ভাগাড় রয়েছে, যা দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভাগাড়ে প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ২০০ টন বর্জ্য ফেলা হয়, যার ফলে এটি একটি "ময়লার পাহাড়"-এ পরিণত হয়েছে। এর দুর্গন্ধ এবং পরিবেশ দূষণের কারণে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিবিরবাজার স্থলবন্দরের দিকে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় চরম ভোগান্তি হচ্ছে। দূর থেকে দেখতে পাহাড়ের মতো থেকে দেখা যায়, কিন্তু এটি মাটি বা বালুর স্তূপ নয়। তীব্র দুর্গন্ধে নাকাল সাধারণ মানুষ। ময়লা অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পাহাড়সম ময়লার ভাগার এখন পুরো এলাকার জন্য ভয়াবহ পরিবেশগত অস্বাস্থকর আকার ধারণ করছে । প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করা এই সড়কটি এখন দুর্গন্ধ, নোংরা পানি ও মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। ময়লার স্তুপ থেকে নির্গত তীব্র দুর্গন্ধে নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করতেই বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এতে শুধু চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে না, বরং ছড়াচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে ময়লার দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগের বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
মানুষের বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা সড়কের পাশে ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের ৩০-৩৫ হাজারের বেশি মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের এই অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সূত্রমতে, পৌরসভা থাকাকালীন থেকে আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুর এলাকার প্রায় ১০ একর জায়গার অধিগ্রহণ করা হয়। তারপর থেকে সেখানেই শহরের সব ধরনের বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা ও সদর দক্ষিণ দুই পৌরসভাকে একত্রিত করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই পৌরসভা মিলে মোট ২৭টি ওয়ার্ডের কলকারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির বেশিরভাগ ময়লা-আবর্জনা ঝাঁকুনিপাড়া-দৌলতপুরে ফেলতে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে গ্রামবাসীসহ পরিবেশকর্মীরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তবে গুরুত্বসহকারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। উল্টো গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে তৈরি করেছে পাহাড়-সদৃশ ময়লার স্তূপ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদরা। তবে সিটি কর্পোরেশনের দাবি, প্রতিদিন শিল্পকলকারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা উৎপন্ন হয়, সেই অনুযায়ী ময়লা ফেলার জায়গা নেই। তাই নতুন করে আরও ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে। পাহাড়সম ময়লা-আবর্জনা ধ্বংস করে সম্পদে পরিণত করার জন্য ইসলামিক ডেবেলভমেন্ট উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) পক্ষ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকাসহ মোট ১৫০ কোটি টাকা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার আগ পর্যন্তু মিলবে এই অর্থ। অধিগ্রহণ শেষ হলে পরিবেশ বিপর্যয় হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে বিষাক্ত দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি মিলবে স্থানীয়দের। এলাকাবাসীর দাবি—“ময়লার পাহাড় সরান, দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে দিন।”
তারা দ্রুত বর্জ্য অপসারণ, স্থায়ী ময়লার ভাগার ব্যবস্থাপনা ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বড় ধরনের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এর আগেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণের কথা একাধিকবার স্থানীয়দের বলা হলেও বাস্তুব চিত্র ছিল উল্টো। সিটি কর্পোরেশন নেয়নি কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোলা স্থানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ঝাঁকুনিপাড়া ও দৌলতপুর গ্রামের পাশাপাশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাজগড্ডা, খামার কৃষ্ণপুর, শুয়ারা, জগন্নাথপুর, নবগ্রাম, বালুতুপাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ সিটি কর্পোরেশনের জায়গা ছাড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশসহ সড়কের পাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
ঝাঁকুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল হাসান বলেন, ‘এই স্থানটিতে শুরুতে কুমিল্লা পৌরসভা ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। তারপর গত ১৪ বছর ধরে সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন টনে টনে ময়লা ফেলা শুরু করলো। এইসব আবর্জনা এখন বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এর কারণে গ্রামবাসীর বসবাস করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মাসউদ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়দের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ না করে ময়লা-আবর্জনাকে কীভাবে নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, সেই পরিকল্পনা সময়ের দাবি।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে অসংখ্য বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ প্রতিবার শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’স্থায়ী সমাধান ও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে নতুন করে ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে দ্রুত গতিতে আইএসডিবি ও জাইকার দেড়শ কোটি টাকার পৃথক দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা। তখন ওই এলাকার মানুষও বিষাক্ত দুর্গন্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার সময় পেছাল জার...
এফএনএসকাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় না পৌঁছানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াক...
নিউজিল্যান্ডে ২৪ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে
এফএনএস বিদেশ : নিউজিল্যান্ডে এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো যেন হইচই পড়ে গেছে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরক...
আবার বিশ্বকাপ জিততে চান মেসি
লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে আর কোনো অপূর্ণতা আছে কি? বিশ্বকাপ জেতার পর সেটা আর থাকার কথা নয়। কাতারে ২০২২...
খেলা শুরুর আগেই লাল কার্ড দেখলেন ফুটবলার!
তখনও খেলা শুরু হতে কিছু সময় বাকি। দুই দলের খেলোয়াড়রাও মাঠে নামেননি। মাঠে ঢোকার টানেলেই লাল কার্ড দেখ...
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রথম দুই ওয়ানডে শেষে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করছে। তাই তৃতীয় ও...
নভেম্বর মাসের সেরার লড়াইয়ে তাইজুল
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরই নিজের নির্ভরতার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তাইজুল। প্রতিষ্ঠিত ক...