প্রতিবেদক: Raisul Islam Shohag | ক্যাটেগরি: বৃহত্তর কুমিল্লা | প্রকাশ: 4 Sep 2025, 11:19 AM
সেতুর ২০ ভাগ নিয়ে স্থানীয়দের দৌড়ঝাপ
নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস
কুমিল্লার তিতাসে কর্তৃপক্ষ সুযোগ না দেওয়ায় দড়িকান্দি গ্রামের পাশে খালের উপর সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সেতুর অবশিষ্ট ২০ ভাগ কাজ সমাপ্ত করতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করছে গ্রামবাসী। মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, এলজিইডি’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট সর্বশেষ একাধিক আবেদন জমা দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজির থাকলেও এক্ষেত্রে কোন সুযোগ না দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উক্ত আবেদনপত্রগুলো জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন দড়িকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নায়েব সুবেদার মো. ফারুক কামাল, জিয়ারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেন, দড়িকান্দি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির, দড়িকান্দি ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য হাসিনা আক্তার ও পুরুষ সদস্য মো. শাহ আলী।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রাম সংলগ্ন খালের উপর ২০২২ সালে ৫০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ অনুমোদন হয়। জিসিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ টাকার সেতুটি নির্মাণের টেন্ডার পায় গ্রীন এম.কে (জেবি) কোম্পানি। ২০২২ সালের ২৪ আগষ্ট কাজের কার্য্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। উক্ত সময়ে সেতুর কাজ অসমাপ্ত থাকায় প্রথম দফায় ১ বছর ও পরবর্তীতে ৬ মাস বর্ধিত করে ২০২৫ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সেতুর কাজ পদিরর্শন শেষে চলতি বছরের ২৬ জুন নির্মাণাধীন সেতুর কাজটি বাতিল করে দেন।
স্থানীয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে কাজটি শুরু হলেও পরের বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ১৪টি পিলারের পাইলিং বাকি থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ফসলী জমিতে পানির প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে খালের বাঁধটি কেটে দেয়। বর্ষা পরবর্তী সময়ের প্রায় ৬ মাস সেতুর কাজ বন্ধ থাকে। সেতুর পিলার নির্মাণের সময় কাজের মান খারাপ হওয়ায় একাধিকবার ভেঙে যায়। কখনো শ্রমিক সংকট, কখনো কোম্পানি যথাসময়ে সাইডে মালামাল সরবরাহ না করা, নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় লোকদের বৈরী আচরণ, সাইডে মালামাল রাখা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে একাধিক বাকবিত-ায় কাজটি ধীরগতিতে রূপ নেয়। গত বছরের ৫ আগষ্টের পর প্রধান ঠিকাদার নাজমুল হাসান সবুজ দেশের বাহিরে চলে যাওয়ায় এ ধীরগতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। গ্রামবাসীদের একাধিক আবেদনের প্রেক্ষিতে অংশীদারিত্বের আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ সাইডের দায়িত্ব নেন। চলতি বছরের ৬ জুন পর্যন্ত সেতুর ৮০ ভাগ কাজ শেষ হলেও ২০ ভাগ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে।
দড়িকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নায়েব সুবেদার মো. ফারুক কামাল, প্রধান শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিনা আক্তার জানান, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে গ্রামবাসীর অর্থায়নে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এটি শুধু লোকজন আসা-যাওয়া করতে পারে। প্রতিদিন গড়ে এখান দিয়ে প্রায় ২০ হাজার লোকজন যাতায়াত করে। গ্রামটিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, একটি কিন্ডার গার্টেনসহ ছোট্ট একটি হাট রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র। সবমিলিয়ে এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কোন কারণে কাজ থেমে গেলে গ্রামবাসীর তাগাদায় তা আবার শুরু হতো। গত জুন মাসের ২৬ তারিখ থেকে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে গ্রামবাসী দীর্ঘভোগান্তিতে পড়েছে। অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তির জন্য মঙ্গলবার বিকালে জেলা ও উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাবর আবেদন করেছি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অনেক কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পে-অর্ডার জমা রাখার মাধ্যমে অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু দড়িকান্দির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো। এবিষয়ে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আরো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ফাহিম সরকার জানান, আমি জুনের ২৩ তারিখের এ্যাপ্রোজে ভরাটের জন্য সাইটে বালু এনেছিলাম। দুইদিন অপেক্ষার পর ঠিকাদার জানালো বালু ফেললে নির্বাহী প্রকৌশলী বিল দিবেন না। তাই আমি উক্ত বালু অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছি।
গ্রীন এম.কে (জেবি) একজন অংশীদার রাজিব হোসেন জানান, সাইডে আমার পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্মাণ সামগ্রী আছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার জন্য জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করেছি। যতটুকু কাজ করেছি তার বিলসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা লসে রয়েছি। যেহেতু নির্বাহী প্রকৌশলী কাজটি বাতিল করে দিয়েছে এবং বিল দিবে না বলে জানিয়েছে সেহেতু আমরা বাধ্য হইয়ে কাজটি বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখনোও যদি আমাদেরকে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয় তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে তা শেষ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. খোয়াজুর রহমান জানান, আমি গত সপ্তাহে দায়িত্ব নিয়েছি। তারপর বিষয়টি আলোচনায় থাকায় পূর্বের কর্মকর্তা থেকে যতটুকু জেনেছি, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়াতে কাজটি বন্ধ করা হয়েছে। তবে অবশিষ্ট কাজের প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সামনের একনেকে সভায় যদি কুমিল্লা প্রকল্প অনুমোদন হয় তাহলে তা থেকে আগামী ৩/৪ মাসের মধ্যে অবশিষ্ট কাজটি সম্পূর্ণ করা হবে।
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
অন্যান্য খবর
দু’বছর পর কুমিল্লা স্টেডিয়াম মাঠে ফিরলো ক্রিকেট
নিজস্ব প্রতিবেদকদু’বছর পর কুমিল্লা স্টেডিয়াম মাঠে গড়াল আবার ক্রিকেট। গতকাল রবিবার কুমিল্লা ১ম বিভাগ...
দেবিদ্বারে ষাট বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক কারাগার...
মোঃ আক্তার হোসেনকুমিল্লার দেবিদ্বারে ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগে ফয়সাল (২০) নামের এক যুব...
কুমিল্লায় আমন ধানে ফলস স্মার্টের আক্রমণ ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা...
বাহার রায়হানকুমিল্লায় এ বছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমন ধানে দেখা দিয়েছে ছত্রাকজনিত রোগ...
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছাত্রদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের অনিয়মের অভিয...
নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণপাড়াকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বির...
খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় কুমিল্লায় হাজী ইয়াছিনের ধারাবাহি...
নিজস্ব প্রতিবেদকবিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও সম্পূর্ণ রোগমুক্তি কাম...
শাপলা কাব ও প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকাব স্কাউট’স এর সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ এবং স্কাউট’স এর সর্বোচ্চ প...